Site icon Jamuna Television

২৫ জুলাইকে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা জাতিসংঘের

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালন করতে ২৫ জুলাইকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় বুধবার (২৮ এপ্রিল) ঐতিহাসিক এই রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের রেজুলেশন এটাই প্রথম। দিবসটি ঘোষণার জন্য যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি সমর্থন দিয়েছে ৭৯টি সদস্য রাষ্ট্র।

গত এক দশকে ২.৫ মিলিয়ন মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছে, যা ছিল প্রতিরোধযোগ্য। বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, এরমধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু। মোট মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটে বাংলাদেশের মত মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশে। মহাদেশগুলো মধ্যে এশিয়াতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন পানিতে ডুবে মারা যায়, যার মধ্যে ৪০ জন শিশু। এই মৃত্যুকে ‘নীরব মহামারি’ হিসাবে চিহ্নিত করতে ও তা প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে নির্দিষ্ট একটা দিনের দাবি করে আসছিলো বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় সেই দাবি আলোর মুখ দেখেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বেলিতে এই বিষয়টি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মাতৃ মৃত্যু ও অপুষ্টির জন্য যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় পানিতে ডুবে। বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া, যা প্রতিরোধ করতে এমন একটি রেজুলেশন জরুরি ছিল বলে আমরা মনে করি। এই রেজুলেশনটি বিশ্বের সব দেশকে একই অবকাঠামোতে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এই প্রচেষ্টায় আয়ারল্যান্ড সরকারের সাথে অংশীদার হয়ে কাজ করার জন্য আমরা গর্বিত।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। কিন্তু এই মৃত্যু স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় কম খরচে প্রতিরোধ যোগ্য, যা গবেষণায় প্রমাণ করেছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)।

২০০৫ সাল থেকে সিআইপিআরবি পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ‘আঁচল’ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ করতে পারে ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে, ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শিখিয়ে তা প্রতিরোধ করা যায় ৯৬ শতাংশ। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে এই দুই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

সিআইপিআরবি’র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এবং ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টারের ডাইরেক্টর ড. আমিনুর রহমান বলেন ‘প্রতি বছর ২৫ জুলাই পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস পালনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এ বিষয়ে অধিক সচেতন হবে এবং যথোপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে। এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।’

‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণার জন্য জাতিসংঘ, সহযোদ্ধা আয়ারল্যান্ডসহ ৭৯টি সদস্য রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিকে কৃতজ্ঞতা জানায় সিআইপিআরবি।

ইউএইচ/

Exit mobile version