Site icon Jamuna Television

হাতুড়ে ডাক্তারের খপ্পরে পড়ে ধুঁকে ধুঁকেই মারা গেলেন ভিক্ষুক শেফালি বেগম

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:

বুকের বামপাশের স্তনে সামান্য ব্যথা নিয়ে গ্রামের চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন চার সন্তানের জননী ও পেশায় ভিক্ষুক শেফালি বেগম (৩৭)। স্তন ক্যান্সারের কথা বলে ওই হাতুড়ে ডাক্তার ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেন তার স্তনের অর্ধেক অংশ। তারপর কাটা অংশের পচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধুঁকতে ধুঁকতে গত ১৯ মে মারাই গেলেন শেফালি বেগম।

শেফালির মৃত্যুর খবরে রাতেই ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২০ মে) জানাজায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট গ্রামের অসহায় বিধবা নারী শেফালি আক্তার (৩৭)। স্তনে ব্যথা নিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক মানিক মিয়ার কাছে। মানিক মিয়া শেফালিকে বলেন, তার স্তন ক্যান্সার হয়েছে। স্তন কেটে ফেলতে হবে। এমনকি ২০ হাজার টাকায় অপারেশন করাতেও রাজি করিয়ে ফেলেন তাকে।

গত ২০১৯ সালের ৭ মে স্থানীয় পাঁচহাট বাজারের ইকবাল হোমিও ফার্মেসির ভেতরে অপারেশনের নামে ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলা হয় শেফালির স্তনের অর্ধেক অংশ। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্তনের কাটা অংশে পচন ধরে যায়।

এ বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনে একটি সচিত্র প্রতিবেদনের পর স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসন শেফালির পাশে দাঁড়ায়। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন শেফালি বেগম। অপরদিকে জেলা পুুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর নির্দেশে ভুয়া চিকিৎসক মানিককে আটক করা হয়। পাঠানো হয় কারাগারে।

বাড়িতে যাবার কিন্তু কিছুদিন পরই শেফালির স্তনের ক্ষত স্থানে আবারো পচন শুরু হয়। নতুন করে চিকিৎসা শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সেটি চলমান রাখা সম্ভব হয়নি। অবশেষে দীর্ঘদিন ভুগে গত বুধবার তিনি মারা যান।

খালিয়াজুরী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম মাহমুদুল হক জানান, ভুয়া চিকিৎসায় শেফালির স্তন কাটার ঘটনায় নামধারী চিকিৎসক মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতেও পাঠানো হয়েছিলো। তবেপর তিনি জামিনে বেরিয়ে যান।

ভুয়া চিকিৎসক মানিক পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের কাতলা গ্রামের বাসিন্দা।

Exit mobile version