Site icon Jamuna Television

‘বিমান ছিনতাই’ করে আটক করা হলো সাংবাদিককে!

এর আগেও আটক করা হয়েছিল সাংবাদিক রোমানকে।

সরকারের সমালোচক এক সাংবাদিককে আটকের জন্য ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বেলারুশের বিরুদ্ধে। বিমানে বোমা আছে, এমন তথ্য দিয়ে গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী বিমানকে জরুরি অবতরণে বাধ্য করা হয় দেশটিতে। বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় সাংবাদিক রোমান প্রোতোসেভিচকে। বিষয়টিকে বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদের সাথে তুলনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, গ্রিসের এথেন্স থেকে ছেড়ে আসা রায়ান এয়ারের ফ্লাইটটির গন্তব্য ছিলো লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস। ফ্লাইটটি যখন গন্তব্য থেকে মাত্র শ’খানেক মাইল দূরে বেলারুশের আকাশসীমায়, তখনই বিপত্তি। বেলারুশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে জানানো হয় বোমা আছে বিমানে। নির্দেশ দেয়া হয় গতিপথ পরিবর্তনের।

বেলারুশের ‘মিগ-টুয়েন্টিনাইন’ ফাইটারের প্রহরায় মিনস্ক বিমানবন্দরে অবতরণ করে, ১৭১ যাত্রীবাহী বিমানটি। ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গেছে, বোমার ঝুঁকি কেবল অজুহাত, বিমানের গতিপথ পরিবর্তনের কারণ বিশেষ এক যাত্রী। অবতরণের পরই গ্রেফতার করা হয় লুকাশেঙ্কো সরকারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক রোমান প্রোতোসেভিচকে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, যখন বলা হলো, মিনস্কে অবতরণ করবে বিমান। রোমান তখনই বুঝতে পারেন কী ঘটতে যাচ্ছে। তিনি তাড়াতাড়ি ব্যাগ খুলে ল্যাপটপ আর ফোন অন্য একজনকে দিয়ে দেন।

দেশটির অপর একজন সংক্ষুব্ধ নাগরিকে রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো যা করছেন তা কিম জং উনও করেন না। বেলারুশে রীতিমতো হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেন। বিরোধী মতের হলেই চলে নিপীড়ন। আমরা রোমানের মুক্তি চাই।

নিজেদের আকাশসীমায় থাকা আন্তর্জাতিক রুটের বিমান নামিয়ে কাউকে গ্রেফতারের এ ঘটনাকে সরাসরি ছিনতাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে, বেলারুশের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকটি এয়ারলাইন্স। করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা বলেন, প্রোতাসেভিচের মুক্তি না দেয়া হলে বেলারুশের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। তাদের আকাশপথকে অনিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। ইইউর কোনো বিমানবন্দরেও তাদের বিমান যাতে না নামতে পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।

সরকারের রোষানলে পড়ে ২০১৯ সালেই দেশ ছাড়েন রোমান। আশ্রয় নেন লিথুয়ানিয়ায়। তবে, লুকাশেঙ্কোবিরোধী সংবাদ প্রকাশের দায়ে তারা বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও দাঙ্গায় উস্কানির মামলা করে বেলারুশ।

নেক্সটা চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিসিয়াপেন পুৎসিলার মতে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর ধরপাকড় এদেশের নিয়মিত ঘটনা। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ কাজে আসবে না। কারণ তারা অস্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে।

১৯৯৪ সাল থেকে টানা বেলারুশের ক্ষমতায় আছেন ৬৬ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো। গত আগস্টে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ের পর তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশটি। সেসময় ধরপাকড় এড়াতে অনেক বিরোধী নেতা দেশ ছাড়ে।

Exit mobile version