Site icon Jamuna Television

‘আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিরীহ মানুষ’

'আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান নিরীহ মানুষ'

আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান নিরীহ মানুষ, কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে। হয় তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, নতুবা আমাকে তার পর্যন্ত পৌঁছে দিন। তার ব্যাপারে কথা বলারও কেউ থাকবে না। এমন কথা বলেছেন আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের স্ত্রী।

বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের স্ত্রী আরও বলেন, আমার এই বার্তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিন। উনাকে (আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান) যেন খুব দ্রুত আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি এই অঙ্গনের মানুষও না। আমার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত লেটার দেয়া হয়েছে। আমি ডিবি অফিস র‍্যাব সদর দফতরে গিয়েছি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স গিয়েছি। প্রত্যেককেই আমার পক্ষ থেকে লেটার দেয়া হয়েছে।

এছাড়া আমি র‍্যাব হেডকোয়ার্টার্সে র‍্যবের ডিজি স্যারের সাথে দেখা করেছি এসেছি। উনি আশ্বস্ত করেছেন যে তাদের কাছে নেই। খোঁজ পেলে জানাবে। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি কি মনে করেন তিনি প্রশাসনের কাস্টডিতে আছে? আমি বলেছি, না। আমি এমন মনে করে আপনাদের শরণাপন্ন হইনি। আমি তাকে খুঁজে বের করতে পারবেন সে আশা নিয়ে এসেছি। আপনারা চাইলেই অল্প সময়ের ভেতর তাকে খুঁজে বের করতে পারবেন।

তবে আমার ধারণা, এটা অবশ্যই প্রাইভেট কোনো সংস্থার কাজ হতে পারে না। প্রাইভেটভাবে তাকে গুম করা হয়েছে এমন হতে পারে। প্রশাসন চাইলে তাকে অল্প সময়ের ভেতর খুঁজে বের করতে পারে।

আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের স্ত্রী জানান, তিন বা সাড়ে তিনটায় তিনি বের হয় বগুড়ার উদ্দেশ্যে একটা প্রোগ্রামে যান। সাথে ফিরোজ ও মুহিত নামে দুজন ছিলো। ড্রাইভার আমির ড্রাইভ করছিলো। প্রোগ্রাম শেষ করে তার ঢাকা ফেরার কথা ছিলো। চারটার পর তাকে কল করে কী খাবা জানতে চাইলে তিনি রেগে যান। রেগে বলেন, কোথায় আছি, কেমন আছি জিজ্ঞাসা না করে কী খাবো এ প্রশ্ন করতেছো। আমার মনে হচ্ছে আমার পেছনে দুইটা বাইক আমাকে ফলো করতেছে। আমি যেন বাসায় নিরাপদে বাসায় পৌঁছাতে পারি যে দোয়া করো।

এর কিছুক্ষণ পরে উনি নিজেই কল করে জানায়, রান্না করো আমরা চারজন আসতেছি। বাইকগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। এর মাঝেও কথা হয়। ‌’কতটুকু আসলা’ জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাধারণত ম্যাপের স্ক্রিনশট নিয়ে পাঁঠিয়ে দেয় হোয়াটস অ্যাপে। সেদিনও অনেকগুলা ম্যাপ শেয়ার করেছে। লাস্ট কলগুলো সম্ভবত ঘুমিয়ে থাকার জন্য তিনি রিসিভ করতে পারেননি। উনার লাস্ট ম্যাপ শেয়ার টাইম ছিলো ২টা ৩৭ এ। যে জায়গা দেখাচ্ছিলো তাতে ১৮ মিনিট এর ভেতর তিনি মিরপুর ইন করবে দেখাচ্ছিলো। পরে ৪টার দিকে তার ফোন সুইচ অফ পাই। এরপর আমিরের ফোনও সুইচ অফ পাই।

উল্লেখ্য, রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকেই নিখোঁজ হয়েছেন ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান। তার মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন দেখে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত আড়াইটায় দুই সহকর্মী ও গাড়িচালক সহ নিখোঁজ হন আদনান। সপ্তাহ খানেক পেরিয়ে গেলেও কোন খোঁজ না মেলায় চরম দুঃশ্চিন্তায় নিখোঁজ চারজনের পরিবার।

আফছালুল আদনান ওরফে আবু ত্ব-হা মো. আদনান। গত ৮ জুন রাতে রংপুর পায়রা চত্বর এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সাথে ছিলেন সহকর্মী আব্দুল মুহিত আনসারী, ফিরোজ আলম ও গাড়ি চালক আমির উদ্দিন। সর্বশেষ রাত আড়াইটার দিকে ফোনে স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের সাথে আদনানের কথা হয়। এসময় গাবতলী এলাকার লোকেশন স্ত্রীর ফোনে পাঠান আদনান। তারপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। নিখোঁজ বাকিরাও। স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন বিকেলেই আদনানের সন্দেহ হয় কেউ তাকে অনুসরণ করছে।

তাৎক্ষণিক ভাবে রাজধানীর দারুসসালাম থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ জানায়, আদনানের সর্বশেষ লোকেশন দেখা গেছে রংপুরে। তাই সেখানকার পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বলা হয়। গত শুক্রবার (১১ জুন) রংপুর কোতওয়ালী থানায় জিডি করেন আদনানের মা। নিখোঁজ অন্য ৩ জনের পরিবারও রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়। ড্রাইভার আমির ও সহকর্মী মুহিতের বাড়ি রংপুর শহরে। আর ফিরোজের বাড়ি বগুড়ায়।

পুলিশ বলছে, আদনানের ফোনের সর্বশেষ উপস্থিতি ছিল গাবতলী ও মিরপুর ১১ এর মাঝামাঝি এলাকায়। তাকে খুঁজে পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

Exit mobile version