Site icon Jamuna Television

সৌদি রাজপরিবারকে রক্ষায় ১ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে পাকিস্তান!

সৌদি আরবে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা অবস্থান করছে। মূলত মক্কা ও মদীনায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইসলাম ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তায় এই সৈন্যরা নিয়োজিত।

তবে সর্বশেষ খবর হলো, সৌদিতে নতুন করে আরও ১ হাজার সেনা পাঠাচ্ছে ইসলামাবাদ। আর এ নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা গুঞ্জন। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী অনেক রাজনীতিবিদই প্রশ্ন তুলছেন- কেন এখন সৌদিতে সেনা পাঠানো হচ্ছে তা নিয়ে।

সৌদি আরবের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের বহুমাত্রিক দিক রয়েছে। ইসলামাবাদ রিয়াদের আর্থিক সহায়তা ও প্রবাসী শ্রমবাজারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অন্যদিকে সামরিক ও কৌশলগত অনেক দিক থেকে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমানবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানের ওপর বেশ নির্ভর করে রিয়াদ।

আবার সৌদির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও শিয়া মুসলিমদের দ্বারা শাসিত ইরান পাকিস্তানের প্রতিবেশি। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ স্থল ও সমুদ্রসীমা রয়েছে। পাকিস্তান সুন্নী মুসলিম প্রধান দেশ হলেও জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিয়া মতাবলম্বী। ফলে সৌদি আরবের সাথে কোনো ধরনের কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে ইরানের স্বার্থকেও মাথায় রাখতে হয় ইসলামাবাদের।

এই সমীকরণের কারণেই তিন বছর আগে ইয়েমেনে শিয়াপন্থি হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে সৌদির নেতৃত্বাধীন ইসলামিক সামরিক জোটে যোগ দেয়নি পাকিস্তান।

কিন্তু হঠাৎ করে এখন কেন সেনা পাঠাতে হচ্ছে। তার ব্যাখ্যা খোদ পাকিস্তানের সংসদেই চাওয়া হয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর ব্যাখ্যা প্রদানে অস্বীকার করেছেন। এ কারণে তাকে ‘সংসদ অবমাননার’ অভিযোগের মুখেও পড়তে হচ্ছে।

খুররম দস্তগীর বলেছেন পাকিস্তানের প্রেরিত সৈন্যরা সৌদি আরবের বাইরে দায়িত্ত্ব পালন করবে না। ইয়েমেনে তো নয়ই। মন্ত্রী আরও দাবি করেন, প্রশিক্ষণের জন্যই সৈন্য পাঠানো হচ্ছে সৌদিতে।

কিন্তু তার এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারছে না। বিশ্লেষকদের অনেকে ধারণা করছেন, মূলত সৌদি রাজপরিবারকে রক্ষার জন্যই পাকিস্তান থেকে সৈন্য যাচ্ছে রিয়াদে। যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের উত্থানের পর রাজপরিবারের প্রভাবশালী অনেকেই কারান্তরীণ রয়েছেন। কেউ কেউ ছাড়া পেলেও চাপের মুখে আছেন।

রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং ফেলো কামাল আলম মিডল ইস্ট মনিটরকে বলেছেন, সৌদি শাসকরা সম্ভবত অভ্যন্তীরণ সমস্যা দেখছেন। তারা নিজ পরিবারের লোকদেরকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। এ কারণেই পাকিস্তানীদের সহায়তার উপর নির্ভর করতে চাচ্ছেন তারা।

কামাল আলম জানান, এটিই প্রথম কোনো ঘটনা নয় যেখানে পাকিস্তানিরা সৌদি রাজপরিবারকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। ৭০ এর দশকে বাদশাহ ফয়সালের সময় পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। তখনও পাকিস্তানি সেনারা রাজপরিবারের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। ১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল হকও সে দেশে শাসক গোষ্ঠিকে সহায়তার জন্য সৈন্য পাঠিয়েছিলেন।

কথিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলন পরিচালনা করছেন সৌদি যুবরাজ বিন সালমান। এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধেও চালানো হচ্ছে অভিযান। তবে সমালোচকরা মনে করেন, রাজপরিবারে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে দুর্নীতির নামে দমনে নেমেছেন বাদশাহ সালমানের পুত্র।

Exit mobile version