Site icon Jamuna Television

‘আমরা যেন শিক্ষক নই, একদল বিপথগামী মানুষ’

মহামারীতে নিদারুণ জীবন যুদ্ধে নেমেছেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। এক বছরেও মেলেনি সরকারি অনুদানের কিছুই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরির ভার যাদের হাতে, জীবন বাঁচাতে তাদের কেউ হয়েছেন চা বিক্রেতা, কেউ আবার বিক্রি করছেন খেলনা। বাড়িভাড়া দিতে না পেরে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলের ক্লাস রুমে।

তেমনই এক শিক্ষক নিজাম উদ্দিন। আনাড়ি হাতে চায়ের কাপ আর ক্রেতার প্রতীক্ষায় প্রতিটি দিনের শুরু হয় এখন তার। অথচ এক বছর আগেও তার পরিচয় ছিল একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বছরখানেক আগেও প্রায় তিনশো শিক্ষার্থীর উচ্ছলতায় মুখর থাকতো আঞ্জুমান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজামউদ্দিনের চারপাশ। ভাড়া দিতে না পারায় ছাড়তে হয়েছে বাসা। অন্য চার সহকর্মী সহ উঠেছেন স্কুল ভবনেই।

আঞ্জুমান রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানালেন, লন্ড্রির দোকান দিয়েছিলেন তিনি উপায়ন্তর না দেখে। কিন্তু সেখানেও সুবিধে হয়নি। মাস দুয়েক আগে বসেছেন কেটলি ও চায়ের কাপ নিয়ে। শিক্ষিত না হলে তো এসব কাজই করতে হতো ভেবে সান্ত্বনা খুঁজছেন তিনি। জানালেন, প্রতিদিন দুই কেজি চাল নিয়ে বাসায় যান এখন। আর স্বপ্ন দেখেন, প্রাণের স্কুলটি আবার মুখরিত হবে শিশুদের পদচারণায়।

সংকটকালে সব হারিয়েছেন। তবুও প্রাণের প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে এক কঠিন যুদ্ধে নেমেছেন নিজাম উদ্দিন। এ নিয়ে কটু কথাও কম শুনতে হয়নি তাকে।

একই অবস্থা গ্রীন লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুর আক্তার ডলির। তবে সহজে দমে যাবার পাত্র নন তিনি। ১১ বছরের গড়া প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে ঋণ করে ঘি খাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে তার। এরই মধ্যে হয়েছে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ। টিকে থাকতে স্কুল প্রাঙ্গনেই শুরু করেছেন শিশুদের খেলনা এবং মৌসুমী ফল বিক্রি।

গ্রীণ লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুর আক্তার ডলি জানান, স্কুলের একজন শিক্ষক যিনি ১০-১২ বছর ধরে এখানে কাজ করেছেন, তিনি বেতনের অভাবে বাসাভাড়া দিতে পারেননি। তাই স্কুল ঘরেই তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন নুর আক্তার ডলি। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি সরকারের মনোভাবে মনে হচ্ছে আমরা শিক্ষক নই, একদল বিপথগামী মানুষ। তাদের দিকে কারোরই কোনো সুনজর পড়ে না।

প্রাণের উচ্ছলতায় মুখর থাকা আঙ্গিনায় আজ রাজ্যের নীরবতা। গেল এক বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ শিক্ষকদের। পেশা ছেড়েছেন তাদের অধিকাংশই।

নিকট ভবিষ্যতে স্কুল খোলা নিয়ে যদি ইতিবাচক কোন সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে বাকীদের মত ডলি আক্তারকেও গ্রামের পথ ধরতে হবে। এমন শঙ্কায় পার হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত।

Exit mobile version