Site icon Jamuna Television

ওমানে বিল্ডিং থেকে পড়ে গিয়ে প্যারালাইজড, রংমিস্ত্রীকে বিশেষ বিমানে আনা হলো ঢাকায়

পাহাড়সম স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ওমানে। স্বপ্ন ছিল সেখানে গিয়ে টাকা রোজগার করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু ৩ বছর আগে ওমানের মাস্কাটে একটি বড় বিল্ডিংয়ে রং করতে গিয়ে নিচে পড়ে যান। বেঁচে যান ভাগ্যক্রমে কিন্তু সমস্ত শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। বেদনাদায়ক কথা হচ্ছে তার পরিবারের কোনো সদস্য তার দায়িত্ব নিতে চায়নি। মাস্কাট থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে পরিবারের সদস্যরা সাফ জানিয়ে দেয় পঙ্গু ছেলেকে তারা ফিরিয়ে নেবে না। তবে তার পরিবারের সদস্যরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এমনি বেদনাদায়ক এক ঘটনার কথা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কেবিন ক্রুর ফেসবুক পোস্টে থেকে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কেবিন ক্রু তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু হিসেবে এবং একজন ফ্রন্টলাইনার হিসাবে হাজারাে তিক্ত, সুন্দর, বেদনাদায়ক নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার শেষ নেই। আমি আজকের মাস্কাট ফ্লাইটের একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করবাে। মানবিক কারণেই আমি উনার ঘটনা শুনে খুবই আপসেট। সারাদিন মাথায় বিষয়টা ঘুরপাক খাচ্ছে। ছেলেটির নাম রাশেদ। জন্ম ০৯/১১/১৯৮৪ সালে। উনাকে নিয়ে কিছু লিখবাে আজকে। কারণ উনাকে নিয়ে লেখার আর কেউ নেই। মাস্কাটে তিন বছর আগে বিল্ডিংয়ের রং করতে গিয়ে উঁচু বিল্ডিং থেকে পড়ে পুরাে শরীর এমনি ফ্র্যাকচারড হয়েছে যে, জানে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু প্যারালাইজড। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে চোখটা খুলে নির্বিকার তাকিয়ে থাকে। আবার চোখ বন্ধ করে। কথা বন্ধ। ছেলেটি এভাবেই তিন বছর ধরে মাস্কাটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পড়ে ছিলা। উনার কোম্পানি সব খরচ বহন করেছে। উনাকে ফেলে দেয়নি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলাে উনার পরিবারের সাথে তার কোম্পানি থেকে কয়েকবার যােগাযােগ করেও তারা তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পঙ্গু ছেলে তারা ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলেছে তাকে যেন দেশে পাঠানাে না হয়।

তিনি আরও লেখেন, ধরে নিলাম তারা দরিদ্র। দায়িত্ব নিতে চায় না। তারপরেও তাদের এই সন্তান যদি সুস্থ থাকতাে, কাঁড়ি কাঁড়ি রিয়াল পাঠাতাে, তাহলে কিন্তু এরাই তাকে পূজা করতাে, মাথায় তুলে রাখতাে। বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত অমানবিক মনে হয়েছে। আহারে জীবন!!

জানা যায় ওই যুবকের নাম নুর উদ্দিন রাশেদ। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার নুরুল্লাপুর গ্রামের আবদুর রোবের ছেলে। রাশেদ চার বোনের একমাত্র ভাই। তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

রাশেদের বোন রোকসানা রুকু সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ভাইয়ের যখনি অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়েছি তখনি আমরা তার খোঁজ খবর নিয়েছি। ভাইয়ের বেশ কয়েকজন বন্ধু আছে তারা সবসময় দেখাশোনা করেছে। মাস্কাট থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আমরা বলেছিলাম আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ। আমার ভাইকে একটু সুস্থ করে দেশে পাঠিয়ে দেন। তারপর করোনা আসার কারণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার ভাইকে নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের পোস্ট দিয়েছে যা দেখে আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমাদের চার বোনের একমাত্র ভাই। আমরা কীভাবে এ কথাগুলো বলতে পারি?

তিনি বলেন, আমার ভাইকে এখন নিউরো সাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা জেনেছি আমার ভাইয়ের চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে কিন্তু এখানে এসে তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। ডাক্তার যখন যা লিখছে আমরা বাহিরে থেকে তাই কিনে আনছি। রোগীর চিকিৎসা করতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছে ডাক্তাররা। কিন্তু আমরা এত টাকা কীভাবে জোগাড় করবো। আমাদের একটি জমি বিক্রি করার কথা চলছে। কিন্তু সেই জমি বিক্রির টাকা ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বেশি হবে না।

ইউএইচ/

Exit mobile version