Site icon Jamuna Television

ফ্রান্সের জয়ের মালা ছিনিয়ে নিয়ে শেষ আটে সুইজারল্যান্ড

জয়ের মালা পরার পর যদি তা ছিড়ে যায় কী দশা হয়! তাই যেন হলো ফরাসিদের; উল্লাস মিইয়ে গেলো বিষাদের স্তব্ধতায়। ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে ৩-১ গোলে পাল্টা আধিপত্য। জয় যখন সুনিশ্চিত তখন শেষ ৫ মিনিটের সুইস ম্যাজিক। তারপর একের পর এক সুযোগ ক্রসবারে প্রতিহত। সবশেষ টাইব্রেকের শেষ শটে স্বপ্নভঙ্গ।

রুমানিয়ার বুখোরেস্টে সোমবার রাতে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় ম্যাচটিতেও ফুটবলের সবটুকু সৌন্দর্যই যেন ধরা দিলো। আর গোলরক্ষক ইয়ান সমারের হাতের স্পর্শে টাইব্রেকে ৫-৪ এ ম্যাচ জিতলো সুইজারল্যান্ড। নির্ধারিত সময় ৩-৩ স্কোরলাইনে শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে নীলদের আধিপত্য থাকলেও সাদা রক্ষণ দুর্গে আছড়ে পড়ে একের পর এক আক্রমণ। তারপর তো সমার উপাখ্যান আর এমবাপ্পের চাপা আর্তনাদ।

ইউরোর শেষ ষোলোর লড়াইয়ে প্রথমার্ধে নিজেদের আধিপত্য দেখাতে পারেনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। বুখারেস্টের ন্যাশনাল অ্যারেনায় ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় গোল হজম করে বসে তারা। বক্সের বাঁ দিক থেকে স্টিভেন জুবেরের উঁচু ক্রসের বল লাফিয়ে উঠে দারুণ হেডে জালে জড়ান হ্যারিস সেফারোভিচ। ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস বাঁ দিকে ডাইভ দিলেও নাগাল পাননি বলের। গ্রুপের শেষ রাউন্ডে তুরস্কের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়েও একটি গোল করেছিলেন বেনফিকার ফরোয়ার্ড সেফেরোভিচ।

পিছিয়ে পড়া ফ্রান্স এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে কিন্তু ফরাসি স্ট্রাইকাররা সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। গোলের উদ্দেশে নেওয়া তাদের ছয় শটের একটিও ছিল না পোস্টে। তাই গোটা অর্ধজুড়ে দারুণ খেলেও হতাশ হয়ে মাঠে ছাড়েন গ্রিজম্যান। এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় দিদিয়ের দেশমের দলকে।

দ্বিতীয়ার্ধে গুছিয়ে ওঠে ফরাসিরা। তবে পাল্টা আক্রমণে যেতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি সুইজারল্যান্ড। তেমনই এক আক্রমণে ডি-বক্সের লাইনে জুবেরকে ফরাসি ডিফেন্ডার বাঁজামাঁ পাভার্দ ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু ফরাসিদের কাবু করার সুযোগটা হেলায় নষ্ট করেন রিকার্দো রদ্রিগেস। তার দুর্বল স্পট কিক ঠেকিয়ে দেন লরিস।

এরপরই জেগে ওঠে ফ্রান্সের আক্রমণভাগ। বেনজেমার দুই গোলে এগিয়ে যায় গত আসরের রানার্সআপরা।৫৭তম মিনিটে এমবাপ্পের ডি-বক্সের মুখে বাড়ানো বল সামনে ঝুঁকে থাকা বেনজেমার পেছনে ছিল। অসাধারণ দক্ষতায় বাঁ পায়ের ফ্লিকে বল সামনে টেনে নেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা, তারপর আলতো টোকায় খুঁজে নেন ঠিকানা।

সুইসরা গুছিয়ে ওঠার আগেই দুই মিনিট পর আবারও তাদের জালে বল জড়ান বেনজেমা। এমবাপ্পের ব্যাকহিল রিসিভ করে গ্রিজমানের ক্রস, একেবারে কাছ থেকে লাফিয়ে হেডে বাকি কাজ সারেন সুযোগসন্ধানী বেনজেমা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে করলেন দুটি করে গোল।

এরপর ৭৫তম মিনিটে দূর থেকে জাদুকরি শটে স্কোরলাইন ৩-১ করেন পল পগবা। তার জোরালো শটে প্রতিহত করার কোনো সুযোগই রাখেননি। ইউরোর ইতিহাসে পিছিয়ে পড়ে বিরতিতে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে কামব্যাক করে সবচেয়ে বেশি জয়ের দেখা পাওয়া দল ফ্রান্স। সেটি যখন আরও বাড়ার পথে তখন ৮১তম মিনিটে কেভিনের দারুণ ক্রসে আবারও হেডে ব্যবধান কমান সেফেরোভিচ। ফরাসিদের স্তব্দ করে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে স্কোরলাইন ৩-৩ করেন বদলি খেলোয়াড় মারিও গাভরানোভিচ।

চার মিনিট যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই পেয়েছিল জয় ছিনিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। সুইসদের একাধিক হাফচান্স রুখে দেন লরিস আর কিংসলে কোমানের বুকে রিসিভ করে নেয়া শার্প শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে।

৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচজুড়ে নিজের ছায়া হয়ে থাকা স্পিডস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে একাধিক সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। ১১০তম মিনিটে ফরাসিদের আরও একবার এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পান পিএসজি তারকা। কিন্তু ডি-বক্সে দারুণ পজিশনে বল পেয়েও বাম পায়ে রিসিভ করতে গিয়ে পজিশন হারান। পাশের জালে বল মেরে হতাশায় ভাসান গোটা দলকে। পুরো টুর্নামেন্টে এমনই দেখা গেছে তাকে। আফসোসের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকলেন টাইব্রেকের শেষ শটটিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়ে।

এরপর যা হওয়ার তাই হলো। বেদনার নীল যখন গ্রাস করেছে ফরাসি শিবিরকে তখন সুইসদের বিজয়োল্লাসে প্রকম্পিত হচ্ছে বুখারেস্ট শহর।

Exit mobile version