Site icon Jamuna Television

অনুপস্থিত শিক্ষার্থী মেধাতালিকায়: সাংবাদিককে তথ্য দেয়ার অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে ‘অনুপস্থিত শিক্ষার্থী মেধাতালিকার ১২ তম’ অবস্থানে আসা সংক্রান্ত তথ্য সাংবাদিকের কাছে দেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই শিক্ষকের নাম মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর।

অনুপস্থিত শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় আসার খবর কিভাবে গণমাধ্যমে গেলো তা খুঁজে বের করতে গঠিত উচ্চতর তদন্ত কমিটির সুপারিশে এই নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তবে যাদের গাফেলতিতে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধাতালিকায় চলে আসে তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার।

জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের এক শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় ১২ তম অবস্থান দখল করার ঘটনা ঘটে। এরই ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ওই ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৩ ডিসেম্বর তদন্ত শেষে সংবাদ সম্মেলনে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধাতালিকায় আসার বিষয়টি স্বীকার করে। পাশাপাশি জানায়, এটি কোনো ‘জালিয়াতি’ ছিলো না। বরং ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী ভুল রোল নাম্বার ভরাট করে৷ আর এ ভুলের কারণে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকায় চলে আসে৷

এর পর থেকেই এই তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহকারীকে খুঁজতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গণমাধ্যমে এই তথ্য কিভাবে গেলো তা খুঁজে বের করতে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কুবির একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য বর্তমানে কুবির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এই তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের যে তদন্ত কমিটি তার দায়িত্বই ছিল এই তথ্য কারা বের করেছে সেটা খুঁজে বের করা। সেজন্য গোয়েন্দা তথ্য ও মোবাইলে কথোপকথন বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে সাংবাদিকের সবশেষ কথা বলার ২৬ সেকেন্ড পরেই সংবাদটা প্রকাশ হয়েছে। এসব তথ্য থেকেই বোঝা যায় যে, মাহবুবুল হক ভূঁইয়াই সাংবাদিককে তথ্য দিয়েছে। এ বিষয়টা নিশ্চিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে কার কতটুকু শাস্তি হবে, কি হবে সে বিষয়ে কোনো সুপারিশ দেই নাই। তবে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐ হলে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন, পাশাপাশি ডিন অফিসও তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেটের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, এ ঘটনায় উচ্চতর তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটা সিণ্ডিকেটে তোলা হয়েছিলো। যেখানে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক’ তথ্য সরবরাহের অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

তবে যাদের গাফেলতিতে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধাতালিকায় চলে আসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে ভর্তি পরীক্ষার বি ইউনিটের যে কমিটি ছিলো তাদের এই কাজে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল৷

উচ্চতর এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা প্রকাশ করা হবে না। উপাচার্য অনুমতি দিলে প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধাতালিকার ১২ তম অবস্থানে চলে আসার ঘটনায় ওই ইউনিটের আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অথচ সাংবাদিকের সোর্স আইডেন্টিফাইয়ের নামে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমিই যে তথ্য দিয়েছি সেটা প্রমাণিত না। আমি যদি দায়ীই হয়ে থাকি তবে তারা তদন্ত প্রতিবেদন পুরোপুরি সবার সামনে প্রকাশ করুক।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সভাপতি প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, যদি কোনো অন্যায় হয় তবে শাস্তি হবে বা ক্ষমা হবে৷ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনটি স্পর্শকাতর ও এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মান জড়িত উল্লেখ করে তিনি এটি প্রকাশ করা হবে না বলে জানান।

Exit mobile version