Site icon Jamuna Television

শতবর্ষ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শতবর্ষ পূর্ণ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং জ্ঞানচর্চায় খ্যাতি পেয়েছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে। পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনে অগ্রণী অবদান রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জ্ঞানচর্চায় খানিক পিছিয়ে পড়লেও দেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই।

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কারণে শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষ। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দসহ এই অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার দাবি তুললে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজি হয় ব্রিটিশ সরকার। নাথান কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। মাত্র তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে শুরু করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর একশ বছরে বেড়েছে বহু বহু গুণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নানান গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরাই দিয়েছেন নেতৃত্ব।

একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণায় সৃষ্টি করতেন নতুন জ্ঞান। ‘বোস কণা’ আবিস্কার করে পৃথিবীজোড়া খাতি লাভ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সত্যেন বোস। তারপর থেকেই গবেষণায় ধুকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এখনও দেশসেরা মেধাবীদের প্রত্যাশা থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। প্রত্যাশা পূরণ যেমন আছে, তেমনি আছে হতাশাও।

বাঙালির অধিকার আদায় ও যেকোনো মানবিক বিপর্যয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন এবং ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার শেষ আশ্রয়স্থল। যখনই জাতীয় কোনো সংকট উপস্থিত হয়, সারা দেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই প্রত্যাশা করে সংকটের সঠিক সময়ের সঠিক দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার আগে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল, স্বাধীনতার পরেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়, এমনটিই প্রত্যাশা।

Exit mobile version