Site icon Jamuna Television

মহামারির মধ্যে চিকিৎসা সংকটে ডেঙ্গু আক্রান্তরা

করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে সংকটে পড়েছেন। প্রথমে করোনা ও পরে ডেঙ্গু টেস্টের রেজাল্ট পেতে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করতেই বিলম্বিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি বলছেন, করোনা ও ডেঙ্গুর সিম্পটমে অনেক মিল থাকায় চিকিৎসার জন্য আলাদা প্রটোকল ঠিক করা হচ্ছে। আর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংসে অভিযান অব্যাহত আছে বলে দাবি ঢাকা উত্তর সিটি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।

সম্প্রতি স্ত্রী ও ২ সন্তানসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন সাংবাদিক আসিফ সুমিত। তার স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের সিসিইউতে। তারা করোনা না ডেঙ্গু আক্রান্ত এটা বুঝতে বুঝতেই কেটে গেছে কয়েক দিন।

সাংবাদিক আসিফ সুমিত বলেন, এখন জ্বর হলেই কোভিড মনে করা হয়। টেস্টের রিপোর্ট হাতে পেয়ে হাসপাতালে নিতে সময় লেগেছে ৬ দিন, এরমধ্যেই আমার স্ত্রীর প্লাটিলেট কমে নেমে এসেছে ৭০০০ এ।

জ্বর হলেই এখন করোনার টেস্ট দেয়া হচ্ছে। ধর্তব্যে থাকছে না ডেঙ্গুর আশঙ্কা। এতে করে ঘুরতে হচ্ছে হাসপাতালে-হাসপাতালে, বাড়ছে খরচ-ভোগান্তি-ঝুঁকি।

সাংবাদিক আসিফ সুমিতের একজন স্বজন বলেছেন, এ পর্যন্ত পাঁচটা হাসপাতালে গেছি সুমি ও তার স্ত্রীকে নিয়ে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তারা ঢাকা মেডিকেলে রেফার করেন, ঢাকা মেডিকেলে গেলে তারা জানায় যে তারা টোটালি করোনা ডেডিকেটেড। ইবনে সিনা হাসপাতালে গেলাম কিন্তু তারা ভর্তি নিলোনা। তাহলে এই রোগী নিয়ে কোথায় যাবো আমি?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে জুলাই মাসে প্রায় ১১’শ ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩ জন। ডেঙ্গু ও করোনার পৃথক চিকিৎসা নিশ্চিতে কাজ করছে অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মাদ খুরশিদ আলম বলেন, করোনা এবং ডেঙ্গু বুঝে উঠতে না পারার কারণ হলো এই দুই রোগের অনেকগুলো উপসর্গ ওভারল্যাপ করে। যেসব জায়গায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে সেসব জায়গায় সাপোর্ট ও চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কয়েক বছরের ব্যবধানে এডিস মশার বিস্তার মারাত্মক আকার ধারণ করছে। যদিও সিটি কর্পোরেশনের দাবি চালু আছে মশা নিধন কার্যক্রম গুরুত্ব দিয়েই করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, আমরা মশক নিধনে যে লার্ভিসাইট ব্যবহার করি তার চেয়েও বেশি কার্যকর হলো মানুষের সচেতনতা। বসত বাড়িতে যদি আপনারা বৃষ্টির পানি জমতে না দেন তাহলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ আর বাড়বেনা। ডেঙ্গুর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আমরা সচেষ্ট আছি।

এডিসের প্রজনন হয় স্বচ্ছ পানিতে। তাই আগস্ট সেপ্টেম্বরের বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সে স্থাপনাগুলো এডিস মশা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আরও বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসে নগরবাসীকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

Exit mobile version