Site icon Jamuna Television

রাজস্ব ফাঁকির তদন্ত: কেঁচো খুঁড়তে বেরোলো সাপ

রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল।

বেনাপোল প্রতিনিধি:

বেনাপোল বন্দরে ৩৯ টি ট্রাকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আরো ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস এর অতিরিক্ত কমিশনার ড.নেয়ামুল ইসলাম।

ভারত থেকে আঙুর, টমেটো ও আনার আমদানিতে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব ফাকি দেয়া হয়েছে বেনাপোল স্থল বন্দরে। বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজ এ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় জড়িত বলে কাস্টম কর্তৃপক্ষ জানান।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে রয়েল এন্টারপ্রাইজ বেনাপোল হয়ে ভারত থেকে আঙুর, টমেটো ও আনার আমদানি করে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। তাদের দেখানো ২৮০ টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এসব পচনশীল পণ্যের চালান সাধারনত সন্ধ্যার পর বন্দরে প্রবেশ করে থাকে। রাতেই কাস্টমস কর্মকর্তারা ওয়েইং স্কেলে এসব পণ্য চালান ওজন করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করে থাকেন। কায়িক পরীক্ষার সময় প্রতিটি চালানে ১/২ টন পরিমাণ অতিরিক্ত পণ্য পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত পণ্যের হিসাব পরের দিন সকালে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা সরকারি ট্র্রেজারি ব্যাংকে জমা দিয়ে থাকেন। কিন্ত রয়েল এন্টারপ্রাইজ এসব পন্যের ২৮০ টি বিল অফ এন্ট্রির রাজস্ব জমা দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ ব্যপারে একাধিকবার রয়েল এন্টারপ্রাইজকে টাকা জমা দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেছেন। কিন্ত রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল কাস্টমস এর এসব নোটিশের তোয়াক্কা না করে যথারীতি আঙুর, টমেটো ও আনার জাতীয় ফল কোন বাধা ছাড়াই খালাশ করে আসছে। এভাবে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মাত্র এক বছরে রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক ঢাকা ও যশোরে বিলাসবহুল বাড়ি ও মার্কেটসহ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

আজ বুধবার (২৮ জুলাই) সকালে ৬ জন আমদানিকারকের বিন নাম্বার লক করে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে রয়েল এন্টারপ্রাইজের নামে ফৌজদারি মামলা করার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকালে জালিয়াতি করে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে রয়েল এন্টারপ্রাইজের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। রয়েল এন্টাপ্রাইজের এআইএন নং-৬০১০৫০০১৩।

কাস্টমস সুত্র জানায়, গত শনিবার বন্ধের দিন ভারত থেকে ৩৯ ট্রাক আঙুর, টমেটো ও আনার আমদানি করা হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। পণ্য চালানগুলো খালাশের দায়িত্বে ছিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজ। কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রয়েল এন্টারপ্রাইজ বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড থেকে ৩৯ ট্রাক আঙুর, টমেটো ও আনার বন্দর থেকে বের করে নিয়ে যায়। যদিও কাস্টমস এর চাপে পরদিন ঐ ৩৯ ট্রাকের রাজস্ব সরকারী ব্যাংকে জমা দেয় রয়েল এন্টারপ্রাইজ।

রয়েল এন্টাপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, নতুন করে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় আমার প্রতিষ্ঠান জড়িত নয়। আমদানিকারকের কাছে এই টাকা বকেয়া রয়েছে। আমি বকেয়া এসব রাজস্ব আদায় করে দেয়ার চেস্টা করছি।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আরো ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়েছে। রাজস্বের এই টাকা রয়েল এন্টারপ্রাইজের কাছে বকেয়া পড়ে আছে। আজ সকালে বেশ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিন লক করা হয়েছে। পরবর্তীতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

/এসএইচ

Exit mobile version