Site icon Jamuna Television

টান টান ভৌতিক ‘পরী’র ম্যাড়মেড়ে সমাপ্তি

সিনেমার নায়ক পরমব্রত (অর্নব) পেশায় একজন সাংবাদিক, যাকে ঘিরে পুরো সিনেমার গল্পটি আবর্তিত হয়েছে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তার গাড়ি ছুটে চলেছে। তুমুল বর্ষায় দৃস্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। কিন্তু এরই মাঝে কাউকে ধাক্কা দিয়েছে গাড়িটি। গাড়ি থেকে পরমব্রত নামেননি। কিন্তু কিছু যাত্রী নেমে এসেছেন। শরীরটি উল্টিয়ে দেখে একজন বেদে নারী।

ওই নারীটির মেয়ে রুখসানা, যার ভূমিকার অভিনয় করেছেন আনুশকা শর্মা। রুখসানাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন অর্নব। সিনেমার বিস্তৃতি ছড়িয়েছে কলকাতা, ব্যারাকপুর থেকে ঢাকা অবধি। শক্তিশালী জিন ইফরিত, যে কিনা তার বংশধর বাড়াতে চায়। এতে দেখানো একটি গুপ্ত সংঘ, যারা ইফরিতের এই চেষ্টাকে প্রতিহত করতে চায়।

কিন্তু ধীরে ধীরে বিক্রম ভাটের সেই পরিচিত কৌশলে ফিরে যায় পরী। একটি নীরব জায়গা প্রবেশ, কেউ যেন পেছন দিয়ে হুট করে চলে গেছে। পেছনে ঘুরে দেখা যাবে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এ ধরনের শটগুলো বারংবার বিভিন্ন সিনেমায় বছরের পর বছর ধরে দেখা গেছে। ভয়ের তুমুল একটা ঝটকা দেওয়া জন্য বিষয়টি মন্দ না হলেও এতে সময় গড়ানোর সাথে সাথে সিনেমার প্রতি আগ্রহটা কমে যায়।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শয়তান বিরাজ কলে, মূলত প্রচলিত এই সংস্কারকে রুখসানা চরিত্রে মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন আনুশকা শর্মা। এ ধরনের একটি বিষয় পরিস্ফুটনের জন্য তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু হযবরল চিত্রনাট্য পুরো বিষয়টি মাটি করে দিয়েছে।

সিনেমাটির প্রথম ঘণ্টায় বেশ ভৌতিক আবেশ রয়েছে, ভরে বার কয়েক লাফিয়েও উঠতে হতে পারে। পুরনো বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় রুখসানা তার বক্তাক্ত, ভয়ংকর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। খুব বেশি স্পেশাল ইফেক্ট পরিচালক এখানে ব্যবহার করেননি। আনুশকার মেক-আপ ও অভিনয় দক্ষতার ওপর পুরোটা ছেড়ে দিয়েছেন।

কিন্তু সময় পর পরিচালক অর্নব ও রুখসানার মধ্যে প্রেমের গল্প নিয়ে এসেছেন, এবং বিরতি টানেন ভৌতিক বিষয়াদিতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে দু’জন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে টিভিতে কা্টুন দেখে।

কিন্তু দ্বিতীয় ঘণ্টায় গিয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলে সিনেমাটি। সিনেমার রহস্যময়তা ধীরে ধীরে উবে যেতে থাকে। রুখসানা গল্প জানা হয়ে যায়, এবং ভৌতিক ঘটনাগুলো বার বার ঘটতে থাকে। শেষ অবধি পরিচালক প্রসিত রায় হ্যারিপটার ধরনের একটি ব্যাখ্যা কোনোমতে দাঁড় করিয়ে প্রেমের জয়ের মধ্য দিয়ে তার সিনেমার যবনিকা টানেন।

পরমব্রত এবং আনুশকা উভয়ের অভিনয় ভালো ছিল বলা যায়, এবং পর্দায় তাদের রসায়নটাও জমেছে মন্দ নয়। প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে সিনেমার প্রতিটি ফ্রেম ছিল আঁধারে ঘেরা। পুরো সিনেমায় একটিবারও দিনের আলো দেখানো হয়নি। সব সময় বৃষ্টি পড়ছে।

পুরো সেটটি সাজানো হয়েছে কোলকাতার শতাব্দী প্রাচীন একেবারে জীর্ণ একটি বাড়িতে, বলতে গেলে সিনেমার গল্পের জন্য একেবারে জবরদস্ত একটা জায়গা। পরিচালক প্রসিত রায় ভৌতিক পরিবেশটি বেশ ভালোভাবেই সাজিয়েছেন।

কিন্তু পরী চরিত্র ঘিরেই শুরুতে যে রহস্য ছিল, মাঝ পথেই সেটা সরিয়ে দিয়ে তিনি পুরো সিনেমা আকর্ষণে পানি ঢেলে দিয়েছেন। আর শেষটা বলতে গেলে পরিচালক আসলে কি দেখাতে চেয়েছেন, তিনি নিজেই হয়তো যানেন না।

যমুনা অনলাইন: এফএইচ

Exit mobile version