Site icon Jamuna Television

স্ত্রীর পরকীয়ার বলি স্বামী, ১১ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মৃত্যুর ১১ দিন পর মৃত জলিলের লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি জলিলের লাশ ১১ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আজ রোববার (১ আগস্ট) সকালে লালমনিরহাটের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আল সোহানের উপস্থিতিতে লালমনিরহাট পৌরসভার সাপটানা কবরস্থান থেকে জলিলের লাশ উত্তোলন করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামাল, সদর থানার ওসি শাহা আলম, হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ) মাহমুদুন্নবীসহ মামলার বাদির পরিবারের লোকজন।

এর আগে মৃত জলিলের কুলখানি অনুষ্ঠান শেষে জলিলের বড় ভাই আব্দুর রশিদ ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মমিনা বেগমকে তাদের সাথে গ্রামের বাড়িতে যেতে বলে। কিন্তু মমিনা বেগম তাদের সাথে শ্বশুরবাড়ি যেতে অস্বীকার করেন। প্রয়োজনে এখানেই আবার বিয়ে করবেন বলে মমিনা বেগম সাফ জানিয়ে দেন। ছোট ভাই মৃত জলিলের স্ত্রী মমিনা বেগমের নিকট এ কথা শোনার পর মৃত জলিলের বড় ভাই রশিদের সন্দেহ হয়। এ কারণেই পরেরদিন (২৫ জুলাই) তার ছোট ভাই জলিলকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে পুলিশ সুপার বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর ওইদিনই পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামালের নেতৃত্বে সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন এঙ্গেলে তদন্ত শুরু করেন। প্রাথমিক ভাবে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদেও হত্যার কোন ক্লু পাচ্ছিলো না পুলিশ।

পরে তাদের ফোন কল হিস্ট্রি যাচাই করে গত মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকালে সন্দেহভাজন ৪ জনকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে এসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পরকীয়ার কারণেই জলিলকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন স্ত্রী মমিনা বেগম ও প্রেমিক পল্লী চিকিৎসক গোলাম রব্বানী। হত্যার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় পরে বাকী দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।

পরে নিহতের স্ত্রী মমিনা বেগম ও তার প্রেমিক গোলাম রব্বানীকে ১৬৪ দারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত।

এরই ধারাবাহিকতায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আল সোহানের উপস্থিতিতে পৌরসভার সাপটানা কবরস্থান থেকে জলিলের লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, কোরবানীর ঈদের দ্বিতীয় দিন একসাথেই ছিলেন খুনি গোলাম রব্বানী ও মৃত আব্দুল জলিল। ওইদিন গভীর রাতে রব্বানী কৌশলে জলিলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাড়ি এসে জলিল ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে মমিনা ও তার প্রেমিক রব্বানী তাকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

জলিলের মৃত্যু নিশ্চিত হলে ভোরের দিকে মমিনা বেগম চিৎকার শুরু করেন। পরে আশপাশের লোকজন এসে জলিলের নাকে ও মুখে রক্ত বের হতে দেখেন। এরপর মমিনার প্রেমিক গোলাম রব্বানী তড়িঘড়ি করে শহরের সাপটানা কবরস্থানে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফরিদ আল সোহান জানান,আদালতের নির্দেশে ১১ দিন পর মৃত জলিলের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে জলিলের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় কবরস্থানের চারিদিকে হাজার হাজার উৎসুক জনতার ভীড় লক্ষ করা যায়।

লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান. আসামিদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দির মাধ্যমে উঠে এসেছে তারা দুজনেই চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে বালিশ চাপা দিয়ে জলিলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ইতোমধ্যে লাশ উত্তোলনের করা হয়েছে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইনগত প্রক্রিয়া নেয়া হবে। এই হত্যার সাথে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় নেয়া হবে বলে জানালেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

/এসএইচ

Exit mobile version