Site icon Jamuna Television

সোমপুর বিহারে মানুষ ও খেঁকশিয়ালের মিতালী

মানুষ ও খেঁকশিয়ালের মিতালী।

শফিক ছোটন, নওগাঁ

বিশ্ব ঐতিহ্য নওগাঁর সোমপুর বা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দেখেছেন অনেকে। কিন্তু সেখানকার খেঁকশিয়াল কি দেখেছেন? দিনে যেমন যাদুঘর, বিহারের সৌন্দর্য, পাখির ডাক, ফুলের বাগান, বিশাল আকাশ আপনাকে বিমোহিত করে। তেমনি সন্ধ্যা নেমে আসলে শেয়ালের ডাক স্তব্ধ নীরবতা ভেঙ্গে বিহারের নৈসর্গিক প্রকৃতি উপভোগ্য করে তোলে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে না আসতেই গর্ত থেকে ঝাঁক ধরে বেড়িয়ে পড়ে খেঁকশিয়ালের দল। আবার ধীরে-ধীরে তারা জড়ো হয় ডাক বাংলোর সামনে। তাদের অপেক্ষা কখন আসবে কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু। কারণ প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর শিয়ালের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন তিনি।

পাহাড়পুর বিহার জুড়ে শ’খানেক খেঁকশিয়ালের বসবাস। মাটির ডিবিতে গর্ত করে বসবাস করে শিয়ালগুলো। বছর দুয়েক আগে চাকুরীর সুবাদে পাহাড়পুর বিহার ও যাদুঘরে যোগদান করেন আরজু। যোগদান করেই তার নজরে আসে খেঁকশিয়ালগুলো। পদক্ষেপ নিতে একদম দেরি করেননি প্রাণ-প্রকৃতি প্রেমী আরজু। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীর বংশ বিস্তারে এগিয়ে আসেন।

খাবার দিয়ে শুরু হয় কাছে ভেড়ানোর চেষ্টা, সাথে ডাকাডাকি। এভাবে ধীরে ধীরে খেঁকশিয়ালের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাই এখন সন্ধ্যা নামতেই ডাক বাংলোর সামনে অপেক্ষায় থাকে শেয়ালগুলো। ডাক দিলেই ছুটে আসে। ঘিরে ধরে। কাছে বসে খাবার খাওয়ান আরজু।

ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘সোমপুর বা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও যাদুঘর দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন। অনেকে দলবেঁধে পিকনিকে আসেন। আগতরা পিকনিক কর্নারে রান্না করেন, খাবার গ্রহণ করেন। মানুষের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ খেয়ে বছরের পর বছর টিকে আছে বিহারের খেঁকশিয়ালগুলো। কিন্তু বংশ বৃদ্ধি হয়না খুব একটা। তাদের বংশ বৃদ্ধির বড় বাধা ‘কুকুর’। শেয়াল শাবক দেখতে পেলে কুকুর কামড়ে মেরে ফেলে। তাই প্রজননকালে আলাদা নজর রেখে খাবার দিয়ে খেঁকশিয়ালের বংশ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন আরজু ও তার সহকর্মীরা।

আরজু বলেন, ক্ষুধা পেলেই বাসার দরজায় এসে শব্দ করে, ডাকাকাকি করে ওরা। লকডাউনে দীর্ঘদিন বিহার ও যাদুঘরে বন্ধ ছিল দর্শনার্থীর আগমন। ফলে চরম খাবার সঙ্কটে পড়েছিল খেঁকশিয়ালগুলো। কিন্তু অভুক্ত থাকতে হয়নি কাউকে। ক্ষুধার্ত শিয়ালগুলোর জন্য আলাদা করে চাল কিনে রান্না করা ভাত, খিচুরি পাউরুটি খেতে দেওয়া হয়েছিল। এখনও খেতে দিতে হয়। শিয়ালগুলোকে খাবার দিয়ে আমি আনন্দ পাই। ভালো লাগে।

এই কাজে সহযোগিতা করেন বিহারের সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন ও আরও কয়েকজন। তারাও খাবার দেন। তাদের ডাকেও সারা দেয় শিয়ালগুলো। অল্পদিনেই খেঁকশিয়ালগুলো পোষ মেনেছে বলেন তারা।

পাহাড়পুরে দিনের সৌন্দর্য আর রাতে শিয়ালের মিতালী দেখতে এখন অনেকেই আসছেন। আগতরা বলছেন, খেঁকশিয়াল প্রায় বিলুপ্ত প্রাণী। বংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ ও মানুষের সাথে মিতালীর এই ঘটনা অনেকটা অসাধ্য সাধন। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণীর প্রতি সকলকে সদয় হওয়ার আহবান দর্শনার্থীদের ।

Exit mobile version