
সুমিত্রা রানী।
পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার বেড়া পৌর এলাকার সুমিত্রা রানী। স্বামীর মৃত্যুর পর একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে তিন হাজার টাকা বেতনে আয়া পদে চাকুরি করে চালাচ্ছেন সংসার। সামনে চলছে স্কুল কলেজ খোলার প্রস্তুতি। বাধ্যতামূলকভাবে টিকা নিতে হবে সুমিত্রাকে। কিন্তু, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাকে মৃত দেখানোয় টিকা নিতে পারছেন না তিনি। ভয়ে আছেন একমাত্র সম্বল চাকরিটি হারানোর।
সুমিত্রা রানী বর্তমানে পাবনার বেড়া পৌর এলাকায় বাস করলেও এক সময় তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর খামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ওই সময় উল্লাপাড়াতেই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন হয়। তার মৃত স্বামী গোপাল চন্দ্র সূত্রধর দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। উল্লাপাড়ায় কাজ কমে যাওয়ায় গোপাল চন্দ্র স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আট বছর আগে পাবনার বেড়া পৌর এলাকায় চলে আসেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর পরিবারের অসহায় অবস্থা দেখে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী ভিত্তিতে তাকে প্রতিষ্ঠানটিতে আয়া পদে চাকরি দেয়।
আলহেরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনার টিকা গ্রহণ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ চাকরি করতে পারবেন
না। সে অনুযায়ী সুমিত্রা রানী টিকা গ্রহণের নিবন্ধন করতে স্থানীয় একটি কম্পিউটার সার্ভিসের দোকানে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে
পারেন নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে তাকে মৃত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। পরে বেড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়েও বিষয়টি সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হন।
এর পর থেকে তিনি বেড়া ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে বারবার ছোটাছুটি করেও ‘মৃত’ থেকে আর জীবিত হয়ে উঠতে পারেননি। এর ফলে তিনি টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধনও করতে পারেননি।
সুমিত্রা রানী বলেন, স্কুল থেকে বলেছে টিকা না নিলে চাকরি থাকবি না। চাকরি না থাকলি আমরা খাবো কি? এই চিন্তায় আমি বাঁচি না।
আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাকিমুল কবির বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সবাইকে বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণের জন্য
বলা হয়েছে। সবাই টিকা নিলেও নির্বাচন কমিশনের ভুলে সুমিত্রা রানী টিকা নিতে পারছেন না। তার প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। তবে তার টিকা নেয়ার সাথে প্রতিষ্ঠানের সবার নিরাপত্তা জড়িত।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, আমাদের ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্যে সুমিত্রা রানীকে মৃত দেখানো হচ্ছে। সম্ভবত ২০১৯ সালের তথ্য হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারীর ভুলে এ ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, সুমিত্রা রানীকে দ্রুত উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইসি বরাবর ভুল সংশোধনের জন্য একটি আবেদন জমা দিতে হবে। এ আবেদনটি পাওয়া মাত্রই আমরা তা ইসি সচিবালয়ে কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব। আশা করি সেখান থেকে দ্রুতই বিষয়টি সংশোধন হয়ে আসবে।
/এস এন



Leave a reply