Site icon Jamuna Television

সহিংসতার বিপক্ষে দাঁড়ালেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা, শেবাগকে ‘শিক্ষা নেয়ার’ পরামর্শ

শ্রীলঙ্কায় হঠাৎ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে। গত দুই দিন ধরে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিছু উগ্রপন্থি। সিএনএন এর দেয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, এক যুবক নিহত হওয়াসহ অর্ধশতাধিক বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া কয়েকটি মসজিদ, দোকানপাটও পোড়ানো হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দেশব্যাপী ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। এছাড়া বেশি সহিংসতার কারণে ক্যান্ডিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই প্রথম দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হলো।

দেশের সরকার ও রাজনীতিবিদরা যখন ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কিছু উগ্রপন্থিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গলদঘর্ম, তখন সরব হলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে এবং যারা সহিংসতায় জড়িত তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে আহ্বান জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট কিংবদন্তীরা।

সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা টুইটারে লিখেছেন ‘শ্রীলঙ্কার একজন মানুষও ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে কোনঠাসা হতে বা হুমকির মুখে পড়তে পারে না। আমরা সবাই মিলে এক দেশ, এক জাতি। ভালোবাসা, আস্থা আর একে অন্যকে সাদরে গ্রহণ করাই আমাদের মূলমন্ত্র। এখানে বর্ণবাদ আর সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ঐক্যবদ্ধ হোন আর শক্তিশালী হোন।’

 

আরেক সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে টুইট করে দাবি জানিয়েছেন যেন দ্রুত কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়াই সহিংসতার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

তিনি লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক সহিংসতাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। জড়িতদের ধর্ম-বর্ণ ও জাতিগত পরিচয় যা-ই হোক অবশ্যই এদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আমি ২৫ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছি। আমার পরবর্তী প্রজন্ম একই পরিস্থিতিতে পড়ুক তা চাই না।’

সরব হয়েছেন আরও অনেকে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলে কিংবদন্তী অলরাউন্ডার সমথ জয়সুরিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা যে পরিস্থিতি চলছে আসলে অসুস্থকর। এর নিন্দা জানাই এবং দ্রুত দোষীদের বিচার চাই। এমন কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য শ্রীলঙ্কাবাসীর প্রতি আহ্ববান জানাচ্ছি।

এদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের সময় লঙ্কান ক্রিকেটারদের সরব হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ আলোচনা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিমদের ওপর নানা কারণে নিপীড়ন বেড়েছে। তুচ্ছ ঘটনায় মুসলিমদেরকে পিটিয়ে হত্যার খবর নিয়মিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়।

কিন্তু এসব ঘটনায় ভারতীয় সেলিব্রিটিদেরকে তেমন একটা নিন্দায় সরব হতে দেখা যায় না। উল্টো বিরেন্দর শেবাগ, গৌতম গম্ভীরের মতে কিছু ক্রিকেটার দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী সুরে সুর মেলানোর মতো উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

শেবাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি বিভিন্ন সময়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য টুইটারে পোস্ট করেছেন। সম্প্রতি ভারতের কেরালায় এক নিম্মবর্ণের হিন্দু যুবককে চুরি অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে কয়েকজন যুবক। হত্যাকারীদের মধ্যে ১০ জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ মামলা দায়ের করে; যাদের মধ্যে হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন।

কেরালায় নিহত যুবক মধুকে নিয়ে শেবাগের টুইট। তিনি শুধু হত্যায় জড়িত মুসলিম দুই যুবকের নাম উল্লেখ করেন।

কিন্তু শেবাগ তার টুইটারে নিহত যুবক মধুর ছবি পোস্ট করে সাথে হত্যাকারী হিসেবে শুধু মুসলিম ধর্মাবলম্বী দুই আসামির নাম প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে অবশ্য পরে টুইট করে ক্ষমা চান সাবেক ভারতীয় এই ক্রিকেটার।

ভারতীয় ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ শেবাগের সমালোচনা করে টুইট করেন

এছাড়া গত বছর ভারতীয় এক মুসলিম তরুণীকে ব্যঙ্গ করে টুইট করার জন্যও সমালোচিত হয়েছিলেন শেবাগ ও তার এক সময়ের সতীর্থ গৌতম গম্ভীর। ওই তরুণীর ‘অপরাধ’ ছিলো তিনি ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি চাই’ লেখা ব্যানারসহ নিজের ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন।

এই ধরনের আচরণের প্রতি ইঙ্গিত করে ভারতীয় টুইটার ব্যবহারকারীদের অনেকে লঙ্কান ক্রিকেটারদের কাছ থেকে সাম্প্রদায়িক সহমর্মিতা প্রচারের ‘শিক্ষা নিতে’ শেবাগ-গম্ভীরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সাঙ্গাকারা, মাহেলার টুইট শেয়ার করছেন ভারতীয়রা

সাঙ্গাকারা, মাহেলার টুইট শেয়ার করছেন ভারতীয়রা। একজন লিখেছেন ‘কুচ সিকলে’ (কিছু শেখো)। আরেকজন লিখেছেন, ‘মাহেলার কাছে শেবাগের ক্লাস করা উচিত’।

সাঙ্গাকারা, মাহেলার টুইট শেয়ার করছেন ভারতীয়রা।

 

Exit mobile version