Site icon Jamuna Television

মায়ের মাথা ফাটালেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজু!

মাকে রক্তাক্ত করার অভিযোগ ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজুর বিরুদ্ধে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

জমিজমা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সঙ্গীত শিল্পী সাজু আহমেদ তার মায়ের উপর রক্তাক্ত হামলার অভিযোগ উঠেছে। সাজুর এ ধরণের কর্মকাণ্ডের খবরে জেলা জুড়ে সমালোচনা চলছে।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পাণ্ডুল ইউনিয়নের তেলিপাড়ায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। সাজুর মা রানীজান বেওয়াকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছোরা দিয়ে আঘাত করায় তার বাম চোখের উপরে কপালে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাজুর বড় বোন আঞ্জুমানআরা বেগম বাদী হয়ে সঙ্গীত শিল্পী সাজু আহমেদকে আসামি করে উলিপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সাজুর এ ধরণের কর্মকাণ্ডের খবরে জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হতাশ হয়েছে তার ভক্তরা। হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে অনেকে সাক্ষাৎকার নিয়ে নেটে ছড়িয়ে দিলে নানান মন্তব্য করতে দেখা যায় ভক্তদের।

এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে সাজুর বাবা সাবেক উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আজগার আলী মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে পরিবার চালাচ্ছিলেন মা রানীজান বেওয়া। এরমধ্যে সাজুর বড়ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে কর্মরত রাজু আহমেদের মেয়ের বিয়ের জন্য তার মা দুই ভাইয়ের নামে দলিলকৃত একটি জমি বন্ধক রেখে ৫ লাখ টাকা নেন। এরপর থেকেই জমিজমার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্ব নিরসনে স্থানীয়দের মাধ্যমে চলতি বছরের ১৬ আগস্ট সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে এক বছর পর জমিজমা ভাগবাটোয়ারার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তে নাখোশ ছিল সাজু। ফলে প্রায়ই তাদের মধ্যে বাক বিতণ্ডা হতো।

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে মায়ের সাথে বসচা হয় সাজুর। এই বসচার এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে ছোরা দিয়ে মাথায় আঘাত করতে উদ্ধত হয় সাজু। এসময় সাজুর বড়বোন আঞ্জুমানআরা তাকে ঝাপটে ধরলে তার মায়ের কপালে ছোরার আঘাত লাগে। এতে প্রায় ৩ইঞ্চি গভীরভাবে কেটে যায়। পরে আহতাবস্থায় সাজুর মাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

চিকিৎসাধীন সাজুর মা রানীজান বেওয়া (৬২) জানান, ২০০৮ সালে টিভি চ্যানেল এনটিভি’র গানের রিয়ালিটি শো ক্লোজআপ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হয় সাজু। ওই সময় ছেলের জন্য জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে ১৬লাখ টাকা খরচ করা হয়। এরপর সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সে তা না করে উল্টো আরও টাকা চায়। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার পর সে পাণ্ডুল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিল। প্রচারণার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য সে জমি বিক্রির জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছিল। এনিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। আমাকে অপমান করতো। এখন সে আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ব্যাপারে সঙ্গীত শিল্পী ও জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সদস্য সাজু আহমেদ মায়ের উপর হামলার কথা অস্বীকার করে জানান, সামান্য পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। আমি ভিতরের রুম থেকে বাইরের রুমে শিফট হতে চেয়েছিলাম। কারণ আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব আসে। সেটা আমি মাকে জানালে, মা পাশের গ্রামে থাকা আমার বড় বোন আঞ্জুমানআরাকে মোবাইলে ডেকে আনে। বড় বোন আমাকে শিফট হতে বাধা দেয়। এনিয়ে তার সাথে আমার ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে বড় বোন আমাকে মাটিতে বসার পিঁড়ি দিয়ে আঘাত করলে আমি ঠেকালে সেটি মায়ের কপালে আঘাত করে। আপনারা এলাকায় এসে প্রকৃত সত্য জেনে নিউজ করুন। আমি আমার মাকে আঘাত করিনি। আর ছোরা দিয়ে আঘাতের ঘটনা বানোয়াট।

সাজুর বড় বোন আঞ্জুমানআরা জানান, সাজু এর আগেও মায়ের সাথে এবং আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে। এজন্য জমিজমা ভাগবাটোয়ার করার জন্য মাকে চাপ দিচ্ছিল। মা জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় সে নির্মমভাবে মাকে হত্যার উদ্দেশে ছোরা দিয়ে হামলা করেছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে উলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পুলক কুমার সরকার জানান, রোগীর বাম চোখের উপর কপালে কাটা দাগে ৭টি সেলাই দিতে হয়েছে। এখন অবস্থা উন্নতির দিকে।

এ ব্যাপারে উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবির জানান, সঙ্গীত শিল্পী সাজু তার মাকে আঘাত করেছে মর্মে তার বড় বোন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এজন্য এসআই আনিসুর রহমানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন,বিষয়টিতে আমরা বিব্রত। তবে এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Exit mobile version