Site icon Jamuna Television

অভিমানে ছেড়েছিলেন দেশ-সংসার, ২২ বছর পর নেপাল থেকে ফিরলেন আমেনা

প্রায় দুই যুগ পর নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন আমেনা খাতুন।

বগুড়া ব্যুরো:

১৯৯৯ সালে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আমেনা খাতুন। মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় ২২ বছর। নিখোঁজ মাকে এতদিন মৃতই জানতেন তার সন্তান আর স্বজনরা। সপ্তাহ কয়েক আচমকা নিরুদ্দেশ আমিনা বেগমের (৮০) সঙ্গে নেপাল থেকে ভিডিওকলে কথা হয় বগুড়ার ধুনট উপজেলায় থাকা তার সন্তানদের। দুই দেশের কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) দেশে ফিরেছেন এই মা। প্রায় দুই যুগ পর মায়ের মুখ দেখার আনন্দে উদ্বেল সন্তান ও স্বজনরা।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান আমেনা খাতুন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে তার স্বজনদের কাছে দেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাজবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আমেনা খাতুন স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি আমেনার। ৫৮ বছর বয়সে নিখোঁজ হওয়া আমেনাকে মৃতই ধরে নিয়েছিলেন স্বজনরা। সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রেও মাকে মৃত হিসেবেই উল্লেখ করেছেন তারা।

হঠাৎ করেই গত জুনে স্বজনরা খবর পান, আমেনা খাতুন বেঁচে আছেন। নেপালের সানসুরি জেলার ইনারুয়া পৌরসভা এলাকা তার সন্ধান মিলেছে। এরপর ভিডিও কলে সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে নেপাল থেকে কথাও বলেছেন তিনি।

আমেনা খাতুনের স্বামী মৃত আজগর আলী পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তা র তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর, মেজ ছেলে ফটিক হোসেনের বয়স ৫৮ বছর, ছোট ছেলে ফরাজুল হোসেনের বয়স ৫৪ বছর ও ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫ বছর।

আমেনা বেগমের নাতি আদিলুর রহমান আদিল যমুনা নিউজকে জানান, তারা নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তার দাদীর জীবিত থাকার খবর পেয়েছেন। পরে আমেনার বড় ছেলে আমজাদ হোসেন মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। সোমবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সন্তান আর নাতিরা তাকে বিমানবন্দরে গ্রহণ করতে গেছেন বলেও জানান আদিল।

নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, গত ৩০ মে ৮০ বছর বয়সী আমেনা খাতুনকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সানুসুরি জেলার ইনারুয়া পৌরসভা এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করেন পৌরকর্মীরা। আমেনা প্রায় ১৫/২০ বছর ধরে ওই এলাকায় বাসাবাড়ি ও রেস্টুরেন্টে শ্রমিকের কাজ করতেন। বয়সবৃদ্ধি ও অসুস্থ্যতায় কাজ না পেয়ে তিনি রাস্তায় কিংবা মার্কেটে অবস্থান করছিলেন।

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় তাকে ইনারুয়ার একটি সেভ হাউজে রাখেন পৌর মেয়র যমুনা পোখরেল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা দীর্ঘসময় কথা বলার পর আমেনার বাড়ির ঠিকানা উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ঠিকানামাফিক খোঁজ নিয়ে আমেনার বর্ণনার সত্যতা পান তারা। এরপর তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে প্রক্রিয়া শুরু হলেও নেপাল ও বাংলাদেশে করোনাকালীন লকডাউন থাকায় খানিক বিলম্ব হয়। শেষ পর্যন্ত ২২ বছর পর আজ দুপুরে বাংলাদেশে পৌঁছান আমেনা খাতুন।

Exit mobile version