১৯৩৮ সালে ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ নামে একটি কবিতার সংকলন বের করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সংকলনটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে এটি নিয়ে এত বির্তক শুরু হয়েছিল যে রবীন্দ্রনাধ বাধ্য হয়েছিলেন তার ওই বইটি বাজার থেকে তুলে নিতে।
ওই সংকলনের প্রথম কবিতা ছিল আলাওলের, শেষ কবিতাটি ছিল মহীউদ্দীন নামে জনৈক কবির। আর এই দুইজনের মাঝখানে ছিল কৃত্তিবাস ওঝা, কাশীরাম দাস, বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের কবিতা। ওই কবিতার সংকলনে রবীন্দ্রনাথ যে শুধু পুরনো সময়ের কবিদেরই নিয়েছিলেন তা নয়, নিয়েছিলেন অনেক নতুন কবির কবিতাও। বুদ্ধদেব বসু তো এই সংকলনটি পড়ে বলেছিলেন, এখানে এমন অনেকের কবিতা আছে, তারা যে কবিতা লেখেন তা জানা গেল এই সংকলনটি দেখে। তবে রবীন্দ্রনাথ বইয়ের ভূমিকায়ই লিখেছিলেন— কাব্যসাহিত্যকে আমি ইতিহাসের গণ্ডি দিতে চাইনি।
বইটি নিয়ে সমালোচনার বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন সাহিত্য বিশারদরা। কেউ কেউ ইঙ্গিত করেন, মুসলিম কবিদের কবিতা দিয়ে আরম্ভ হওয়ায়ই এই বইটি নিয়ে সমালোচনা। আবার কেউ কেউ সমালোচনা করেন অন্য কারণে। যেমন বুদ্ধদেব বসু সমালোচনা করেছিলেন, কারণ ওই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ দাশের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি বেশ কেটেছেঁটে সংকলিত করেছিলেন। বসু বলেছেন, অঙ্গহানিতে কবিতাটির ক্ষতি হয়েছে। …সাহিত্যক্ষেত্রে কেউ কারুর কৃপাপ্রার্থী নয়। এমনকি ওই ঘটনার জেরে বুদ্ধদেব বসু তার ‘কবিতা’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর বিজ্ঞাপন পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
চারিদিকে এত সমালোচনায় সিক্ত হয়ে রবীন্দ্রনাথ শেষপর্যন্ত বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন তার ওই সংকলন। আর তিনি পরেরবার নতুন সংস্করণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সজনীকান্ত দাসকে। সজনীকান্ত যথাসময়ে নতুন একটি সংস্করণ তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ বুঝলেন, এই সংস্করণ আগের সমস্যাটিকে আরও জটিল করেব। তাই দ্বিতীয় সংস্করণ আর বের করেননি তিনি। আরও জটিল সঙ্কলন তৈরি করলেন বটে, কিন্তু সেটা দেখে আগের বারের তিক্ত অভিজ্ঞতায় পোড়খাওয়া রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন যে, এই সঙ্কলন সমস্যা আরও জটিল করবে। ফলে দ্বিতীয় সংস্করণটি শেষ পর্যন্ত আর বের করেননি তিনি।

