Site icon Jamuna Television

২ বছর পর যদি কেউ বলে চিনে না, তখন কী করার? মৃত্যুর আগে শিরিনার চিঠি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় শিরিনা আক্তার (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি প্রেমিক মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুন অন্য একজনকে বিয়ে করায় আত্মহত্যা করেছে শিরিনা।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। শিরিনা আক্তার ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা পোস্ট অফিসের এমএলএস সিরাজুল ইসলামের কন্যা। শিরিনা আক্তার চলতি বছর দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা।

মরদেহের সাথে শিরিনার একটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, মিঠুনকে তার পরিবার নিষেধ করলে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় সে। আমি জানি না কী লেখবো, আমার দু’চোখ ভরে শুধু কান্না। মিঠুনের জন্য আমি দুইটা বছর অপেক্ষায় ছিলাম, দুই বছর পর যদি কেউ বলে কে তুই? আমি তোকে চিনি না, আমি এখন কী করবো জানি না।

শিরিনের মা মেহেনিমা বেগম অভিযোগ করেন, ২০১৯ সালে একই ইউনিয়নের উজানে ঝগড়ার গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুনের সঙ্গে আমার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে দু’পক্ষের সম্মতিতে শিরিনার সাথে মিঠুনের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। বিয়ে রেজিস্ট্রির পর মিঠুন সেনাবাহিনীতে সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগ দেয়। মিঠুনের চাকরি রক্ষার জন্য বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে বলে তার পরিবার। কিন্তু পরবর্তীতে গোপনে একই ইউনিয়নের উজান ঝগড়ার চর গ্রামে মিঠুন আরেকটি বিয়ে করে। বিষয়টি জানতে পেরে আমার মেয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম আদালতে মিঠুনসহ ৩ জনের নামে একটি মামলা করেছে।

নিহতের চাচা নইম উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন আগে গভীর রাতে রৌমারী সরকারি কলেজের দফতরি শাজাহান আলীর ছেলে নাহিদ হাসান আমার ভাতিজি শিরিনার ঘরে ঢুকলে তাকে আটক করা হয়। পরে নাহিদের বাবা শিরিনার সঙ্গে দু’দিনের মধ্যে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ছেলেকে নিয়ে যায়। দু’দিন পর জানা যায় অন্য মেয়ের সঙ্গে নাহিদের পরিবার বিয়ে দিয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নাহিদ ভাজতি শিরিনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং লাঞ্ছিত করে। পরপর শিরিনা জীবনে এমন ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা তার।

ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, শিরিনা নামের এক কলেজ ছাত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে রৌমারী থানা নিয়ে যায়। তবে কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা আমার জানা নেই।

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোন্তাছের বিল্লাহ্ বলেন, শিরিনার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Exit mobile version