Site icon Jamuna Television

অন্ধকারে লেবানন

বেশ কয়েকদিনের জন্য অন্ধকারে ডুবে গেছে লেবানন। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে লেবানন; অন্ধকারে দেশটির প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ। তীব্র জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে চাহিদার ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা প্রধান দুই কেন্দ্র। এতে ভেঙে পড়েছে গোটা লেবাননের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর সম্ভাবনাও নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে হিজবুল্লাহর সমর্থক ইরান। যদিও সহায়তা নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে সরকার।

প্রায় দেড় বছর ধরেই ভয়াবহ জ্বালানি সঙ্কটে ভুগছে অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত লেবানন। যার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। দিনে ২৭০ মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায় সরবরাহ। বেশিরভাগ এলাকাতেই দিনে গড়ে মাত্র দু’ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো।

আমদানি নির্ভর জ্বালানির অভাবে শুক্রবারে এক পর্যায়ে বন্ধই হয়ে যায় ‘দিয়ের আম্মার’ ও ‘জাহরানি’ পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রধান দু’টি প্রকল্প অচল হওয়ায় ব্যাহত হয় সারা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ।

লেবাননের একজন বাসিন্দা বলেন, এখানে এমনিতেও দিনে তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। গতকাল থেকে একবারের জন্যও আসেনি। এভাবে কি বাঁচা সম্ভব?

ঘরে থাকা কষ্টদায়ক বলে বাড়ির বাইরে ঘুরছেন অনেকেই। একজন প্রকাশ করলেন তার শঙ্কার কথা। বললেন, বাড়ির বাইরেই সময় কাটাচ্ছি। বাচ্চারা যাতে একটু স্বস্তি পায়। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে জানি না।

রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির বিবৃতিতেও সহসা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার বার্তা নেই। তারা জানিয়েছে, দ্রুতই কেন্দ্র দু’টি চালুর সম্ভাবনা নেই। সাময়িকভাবে সেনাবাহিনীর জ্বালানি তেলের রিজার্ভ ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ কার্যকর হবে সেটিও অনিশ্চিত।

অনেক নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করলেও সেখানেও এখন বেড়েছে সঙ্কট। দৈনন্দিন কাজে নাগরিকদের চরম ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালসহ জরুরি সেবা। একজন হাসপাতাল কর্মীও জানালেন তেমনটাই। বললেন, বিদ্যুৎ ছাড়া সব কাজ বন্ধ হয়ে আছে। কিছুই করা যাচ্ছে না।

আরেক নাগরিক ব্যক্ত করলেন তার কষ্টের কথা। বললেন, ১১ তলার উপর আমার ফ্ল্যাট। বিদ্যুৎ আসার অপেক্ষায় গাড়িতেই ঘুমিয়ে যাই। দেখা যায়, সারা রাতেও বিদ্যুৎ আসে না। কিভাবে চলবো আমরা?

লেবানন সরকারের ঋণের পাহাড়ের প্রধান দায় দেশটির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির। বছরের পর বছর গড়ে প্রায় দেড়শ’ কোটি ডলার করে লোকসান দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি; যার কারণে এক দশকে ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি গচ্চা দিয়েছে সরকার।

লেবাননের সঙ্কটের সুযোগে বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বালানি বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির চেষ্টা করছে ইরান। সম্প্রতি দু’দিনের বৈরুত সফর শেষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, লেবাননে দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে প্রস্তুত তেহরান। গত বছর ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বৈরুত বন্দর পুনর্গঠনেও আগ্রহ দেখায় তারা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দুল্লাহ বলেন, লেবাননে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখবে ইরান। একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রত্যাশা আমাদের। দেড় বছরের মধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করে দিতে প্রস্তুত আছে ইরান।

ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর মাধ্যমে গত আগস্ট থেকেই দেশটিতে জ্বালানি সরবরাহ করছে তেহরান। ইরানের তেল বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিরিয়া হয়ে জ্বালানি প্রবেশ করে লেবাননে। দেশটির জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের এতে আপত্তি থাকলেও চরম সঙ্কটের সময়ে প্রভাব বেড়েছে হিজবুল্লাহর।

এম ই/

Exit mobile version