Site icon Jamuna Television

মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন আসলেই নিরাপদ?

সম্প্রতি প্রথমবারের মতো মানব শরীরে সফলভাবে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই কিডনি কাজও করেছে স্বাভাবিকভাবে। এর মধ্য দিয়ে কিডনি চিকিৎসায় নতুন দ্বার উম্মোচন হয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। আর এই বিপ্লব উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পারে ডোনারের অভাবে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা। এমনকি এই প্রযুক্তি সফল হলে বন্ধ হবে কিডনি নিয়ে অবৈধ বাণিজ্যও।

বিশ্বে প্রতিবছরই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে কিডনি নষ্ট হওয়া মানুষের সংখ্যা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এখন জরুরি ভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন দরকার ৯০ হাজারের বেশি নাগরিকের। কিডনি ডোনারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের। প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থেকেই প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ১২ জনের। কিডনির এই সংকট দূর করতে অভাবনীয় এক বিকল্প উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। মানবশরীরে সফলভাবে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের দাবি তাদের। সম্প্রতি নিউইয়র্কে লাইফ সাপোর্টে থাকা এক নারীর শরীরে যুক্ত করা হয় শূকরের কিডনি। নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মানুষের স্বাভাবিক কিডনির মতোই বর্জ্য ফিল্টার করছে এটি।

নিউইয়র্ক অঙ্গ প্রতিস্থাপন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. রবার্ট মন্টগোমেরি জানান, শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীকে অস্ত্রোপচারের পর ৫৪ ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা। কিডনিটি একদম ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে। ঠিক যেমনটা একজন মানুষের কিডনি থেকে প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত যে সেদিন আর দূরে নয়, যখন মানবশরীরে পুরোপুরি প্রতিস্থাপনে আমরা সফল হবো।

মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে গবেষণা চলছিলে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু, বাধা ছিলো শুকরের কোষে থাকা বিশেষ ধরনের শর্করা। এতোদিন যা মানুষের শরীর গ্রহণ করছিলে না। গবেষণাগারে জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শূকরের সেই শর্করা পরিবর্তনে সফল হয়েছে, মার্কিন বায়োটেক প্রতিষ্ঠান রেভিভিসোর। এই পরীক্ষাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বড় একটি মাইলফলক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। মিনেসোটা মেডিকেল স্কুলের অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিভাগ প্রধান অধ্যাপক ডা. অ্যান্ডু অ্যাডামস মনে করেন, এ খাতটিতে বিশাল পরিসরে কাজের ভিত্তি তৈরি হলো। আমরা যে সঠিক পথেই এগোচ্ছি তা অনেকটাই স্পষ্ট। কয়েক বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ সফলতা আসবে বলেও তিনি আশা করেন।

নিউইয়র্ক অঙ্গ প্রতিস্থাপন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. রবার্ট মন্টগোমেরি জানান, কোনো একটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করলেই বাঁচানো যাবে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ডোনার খুঁজে না পাওয়া যে কতো বেদনাদায়ক তা প্রতিদিনই আমরা টের পাচ্ছি। অর্ধেক রোগী তো ডোনার পাওয়ার আগেই মারা যান। আমরা আশাবাদী, জীবনরক্ষাকারী অঙ্গ সরবরাহের একটি টেকসই উৎস পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিকল্প না থাকায় অনেক দেশেই কিডনি বেচাকেনার চক্র রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি মিললে যেমন প্রাণ বাঁচবে লাখও মানুষের, তেমনি বন্ধ হবে এই অঙ্গ নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য।

Exit mobile version