Site icon Jamuna Television

কাঁদছে শশীর কাকাতুয়া দুটিও!

স্টাফ রিপোর্টার,মানিকগঞ্জঃ

নেপালে বিমান দুর্ঘটনার ৯ দিন পর বাড়ি ফিরেছে তাহিরা তানভীন শশীর মরদেহ। বাসার আঙ্গিনায় লাশবাহী ফ্রিজিং এ্যাম্বুলেন্সটি ঘিরে দাড়িঁয়ে আছেন আত্বীয়-স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশীরা। তিন তলার প্রতিটি রুমেই কান্না আর আহাজারি। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা।

বাসার বেলকুনির এক পাশে খাঁচার ভেতর দুটি কাকাতোয়া পাখি। কিচির মিচির শব্দ করে খুবই ছটফট করছে। যেন বাইরে বের হতে চাইছে তারা। খাঁচার পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন শশীর নানী আলেয়া বেগম এবং কাজের মেয়ে সেনিয়া আক্তার।

তারা জানালেন, সাদা এবং টিয়ে রংয়ের কাকাতুয়া পাখি দুটিকে শশী খুবই ভালোবাসতেন। তিনিই ওদের নাম রেখেছিলেন। বড়টার নাম পিপি আর ছোট পাখিটার নাম জোজো।

রংপুরে থাকতে পাখি দুটি কিনেছিলেন শশী। পড়াশুনার জন্য ঢাকায় অবস্থান করার কারণে কয়েক মাস ধরে পাখি দুটিকে বাবার বাসায় রেখে গিয়েছিলেন তিনি।

বাসায় এলেই পোষা কাকাতুয়া দুটির সাথে খেলা করতেন শশী। সারা ঘরময় তার কাঁধে ও হাতের তালুতে করেই ঘুরতো এ দুটি পাখি।

চোঁখের পানি মুছতে মুছতে নানী আলেয়া বেগম বলেন,পাখি দুটিও হয়তো বুঝতে পেরে গেছেন শশী আর নেই। তাই ওরাও খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

নেপালে ইউএস বাংলা এ্যায়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শশীর মরদেহ মানিকগঞ্জের বাসায় মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০ টায় পৌছে। লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি যখন বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তখন এক শোকাবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিবারের সদস্য,আত্বীয় – স্বজন,পাড়া, প্রতিবেশি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা মা-বাবার।

মঙ্গলবার বেলা ২টায় মানিকগঞ্জ সরকারী দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে শশীর দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক নাজমুস সাদাত সেলিম,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।
পরে আড়াইটার দিকে স্থানীয় সেওতা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মানিকগঞ্জ শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকার বাসিন্দা অসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা.রেজা হাসানের একমাত্র সন্তান তাহিরা তানভিন শশী ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমোনলজি বিষয়ে মাষ্টার্স করছিলেন। এইচএসসি পাস করার পর পরিবারিক সিদ্ধান্তে শশী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্বামী ডা.রেজায়ানুল হক শাওন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত।

গত ১৭ মার্চ সপ্তম বিবাহী বার্ষিকী ছিলো শশী-শাওন দম্পত্তির। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতেই ইউএস বাংলা এ্যায়ারলাইন্সে চেপে নেপাল যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান শশী। আর গুরুতর আহত হন শশীর স্বামী ডা.রেজায়ানুল হক শাওন। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর খবরটি এখনো তাকে জানানো হয়নি।

Exit mobile version