Site icon Jamuna Television

রোহিঙ্গা কারা?

রোহিঙ্গাদের ইতিহাস

বঙ্গোপসাগরের পূর্বতীরে মিয়ানমার রাষ্ট্রের ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে রাখাইন প্রদেশ। যা একসময় আরাকান নামে পরিচিত ছিল। সেখানেই বসবাস রোহিঙ্গাদের। একেই তারা আদি ভূমি মনে করে। ১০ লাখের ওপরে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস ৮’শ বছরের পুরোনো। গত ৩০০ বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৬২ সালের সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও মিয়ানমারের বৈধ জাতি ও নাগরিক ছিলো এই রোহিঙ্গারা। যদিও গত ৮’শ বছরে বর্মিজ, জাপানিজ ও মগ সৈন্যদের নিপীড়নে বহুবার জন্মভূমি থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে এই ভূমিপূত্রদের। টেকনাফ ও কক্সবাজার উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বসতি গড়ে তুলেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তবে, সুযোগ পেলেই কৃষিজীবী রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে গেছে বারবার।

রোহিঙ্গা বিষয়ক লেখক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দীন বলেছেন, ধর্ম ও জীবনযাপনে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীদের সাথের রোহিঙ্গাদের সাদৃশ্য থাকলেও তারা বাঙালি নয়।

জীবন বাঁচাতে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা

মহাকবি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যগ্রন্থ, দৌলতকাজীর ‘সতিময়নালোরচন্দ্রানী’সহ নানা সাহিত্যেও রোহিঙ্গাদের সরব উপস্থিতি প্রমাণিত। বৌদ্ধ রাজাদের রাজসভায় থেকে রোহিঙ্গা বা আরাকানি মুসলমানরাই এসব রচনা করেন। সেই তারাই গত ৫০ বছরে নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তত ৬ দফা বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে এসেছেন। ১৯৫৮-তে জাতি হিসেবে সাংবিধানিক ও ১৯৬২ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার স্বীকৃতি মিলে। সেই তাদেরই ১৯৮২ সালে সামরিক জান্তা আইন করে ‘বহিরাগত’ বলে দেয়।

রোহিঙ্গা বিষয়ক লেখক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দের প্রশ্ন, নাগরিক না হলে কিভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানামারের এমপি নির্বাচিত হয়েছিল? মূলত, নেতৃত্ব ও যোগ্যতার অভাবে তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

রাখাইন থেকে কোনো জোরালো রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি রোহিঙ্গারা। বিদেশ থেকে দুয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে নির্যাতনের প্রতিবাদ করার মধ্যেই সীমিত তাদের তৎপরতা। বিশ্লেষকদের মতে- এই সংকট সমাধানে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাওয়ার বিকল্প নেই রোহিঙ্গাদের।

(রোহিঙ্গা বিষয়ক লেখকদের সাথে কথা বলে ও বিভিন্ন দলিল খতিয়ে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে এনেছেন যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক নূরনবী সরকার।)

যমুনা অনলাইন: টিএফ

Exit mobile version