Site icon Jamuna Television

সন্তান প্রসবের ১৮ ঘণ্টা পর এসএসসি পরীক্ষা দিলো কিশোরী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:

টাঙ্গাইলের সখীপুরে সন্তান প্রসবের ১৮ ঘণ্টা পর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এক কিশোরী। পরীক্ষার্থীর নাম বীথি আক্তার। তিনি উপজেলার মোন্তাজনগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

রোববার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সখীপুর পিএম পাইলট মডেল গভ. স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বীথি আক্তারের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের সানবান্ধা গ্রামে। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর উপজেলার মোন্তাজনগর গ্রামের রানা হাসান নামের একজনের সঙ্গে বীথির বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে সে ২০১৯ সালে মোন্তাজনগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসএসসি পরীক্ষা হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরীক্ষার সময় নির্ধারিত না হওয়ার একপর্যায়ে বীথি আক্তার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

শনিবার দুপুরে বীথির প্রসববেদনা শুরু হলে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল চারটায় স্বাভাবিকভাবে বীথি ছেলেসন্তানের মা হয়।

হাসপাতাল থেকে রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে বীথিকে তার মা এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। শিক্ষকেরা জানান, সে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

উপজেলার মোন্তাজনগর আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, মেয়েটি ভালো ছাত্রী। বিয়ের পর সে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। অন্যান্য মেয়ের মতো নিয়মিত ক্লাস করেছে। সে দমে যায়নি। বাল্যবিবাহ ও সন্তান প্রসব, এসব বাধা তাকে থামাতে পারেনি। সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। সন্তান প্রসবের কারণে বীথির পরিবার থেকে তাকে পরীক্ষা না দেওয়ার জন্য বলা হলেও সে শোনেনি।

সখীপুর পিএম পাইলট মডেল গভ. স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সচিব এমদাদুল হক মিয়া বলেন, পরীক্ষা চলাকালে আমি মেয়েটির খোঁজ নিয়েছি। সে খুব সাহসের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই উপজেলায় দুই শতাধিক মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় তিনি বীথিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এদিকে সখীপুর উপজেলায় এবারের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। এর মধ্যে ২৪ জন মেয়ে ও ২১ জন ছেলে। এসএসসিতে অনুপস্থিত ২১ জনের মধ্যে ১১ জন মেয়ে। দাখিলে অনুপস্থিত ২৪ জনের মধ্যে ১৪ জন মেয়ে। বাল্যবিবাহ হওয়ায় মেয়েরা এবং রোজগারে নেমে পড়ায় ছেলেরা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

Exit mobile version