Site icon Jamuna Television

চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি

সিলেট ব্যুরো:

মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি আর নেই। বুধবার রাত ১১টা ৩৫মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কাঁকন বিবির মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক। তিনি জানান, রাতে কাঁকন বিবির মরদেহ হাসপাতালেই রাখা হবে। সকালে তাঁর পরিবারের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হবে।

গত ১৯ মার্চ (সোমবার) তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। কাঁকন বিবি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট সহ হৃদরোগে রোগে ভুগছিলেন। সোমবার রাতে তাঁর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাঁকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে তিনি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডা. নাজমুল ইসলামের অধীনে ভর্তি হলেও আইসিইউতে ডা. সব্যসাচী রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

১৯১৫ সালে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকার খাসিয়া পল্লীতে জন্ম গ্রহন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। প্রসঙ্গত, গত বছর ২১ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা নেন কাঁকন বিবি। কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

কাঁকন বিবি ১৯৭১ সালে তিন দিনের কন্যা সন্তান সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি রাজাকারদের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হন। তিনি কেবল গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন। ১৯৭১ এর জুনে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন কাঁকন বিবি। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাঁকে। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখনই কাঁকন বিবি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন।

জুলাই মাসে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তাঁর সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। তাঁর ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড়ের। কাঁকন বিবি শুরু করেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করার। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হন। গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবার একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারেরা তাকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

তখন কাঁকন বিবিকে মৃত ভেবে অজ্ঞান অবস্থায় পাকবাহিনীরা ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বালাট সাব-সেক্টরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় ফিরে যান বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন। এর পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখযুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন। কাঁকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধে অসামন্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন।

Exit mobile version