মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে হুমকির মধ্যে পড়েছে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নলুয়ারমুখ কালারবাজার। গত কয়েক বছরে প্রায় অর্ধশত কাঁচা-পাকা দোকানঘর গ্রাস করেছে নদী। বিলীন হওয়ার মুখে ঝুলে আছে অন্তত বিশটি দোকানঘর। বর্ষার আগে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ব্যাসায়ী ও স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের প্রবেশ পথে সিএনজি অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ গাড়িতে করে বাজারে আসছেন। পায়ে হেঁটেও আসছেন অনেকে। সকাল থেকেই বাজারে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় মানুষের। আশপাশের গ্রাম থেকে সবজি-আনাজ নিয়ে এসেছেন অনেকে। মাছ নিয়েও আসতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও সোমবারে হাট বসে কালারবাজারে। বাজারের ভেতর থেকে বুঝার উপায় নেই ভাঙনের তাণ্ডব। গলি ধরে একটু সামনে এগুতেই কুশিয়ারা নদী। নদীর পাড়ে ভেঙে পড়া পাকা ঘরের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিছু ঘরের অর্ধেক অংশ টিকে থাকলেও অর্ধেকটা নদীতে মিশে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ষাটের দশকে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এই বাজার। রাজনগর উপজেলার ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশটি গ্রামের মানুষের বেচাকেনার প্রধান হাট এটি। ক্রমাগত নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে কোটি কোটি টাকার সম্পদ খুইয়ে পথে বসেছেন অনেকে। শুধু বাজারের দোকান-ঘর নয় আশপাশের অনেক বাড়ী-ঘরও ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনের মুখে এখনো বাজারে স্থায়ী ৩০০টি দোকান এবং অস্থায়ী শতাধিক দোকান বসে। এখনো বাজারে প্রচুর মৌসুমি সবজি, মাছ-শুটকিসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে নিয়ে যান এসব। তবে সবচেয়ে বেশি ওঠে মাছ। এছাড়া কাঠ বাঁশও বিক্রি হয় বাজারে।
ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক মির্জা আজাদ বলেন,’ নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে আমার একটি ভবন বিলীন হয়েছে। তিন শতক জমির উপর নির্মিত এই ভবন নদীতে মিশে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য আমরা বারবার আবেদন করেছি কোন ফল পাইনি।’
আরেক ব্যবসায়ী শিব্বির আহমেদ জানান, ‘একসময় এই এলাকার স্থলপথ ভালো ছিল না। নৌপথে মানুষ পণ্য আনা-নেওয়া বেশি করতো। ভৈরব, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত নৌকা কার্গো এসে কালারবাজারের ঘাটে ভিড়তো। স্থানীয় লোকজন ধান, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র এনে বাজারে বিক্রি করতেন। পাইকাররা স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যেতেন।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী কামাল মিয়া জানান, ’৯০ দশক থেকে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন শুরু হয়। ২০১০ সাল থেকে এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। কয়েক দফায় অস্থায়ী মেরামত কাজ হলেও কোন লাভ হচ্ছেনা এজন্য স্থায়ীভাবে কিছু করা। অন্যতায় বাজার রক্ষা করা যাবেনা।’
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল আলীম বলেন, ভাঙনের কারণে ভূমির ও দালানের মালিকদের পাশাপশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বাজারটি রক্ষা করতে বিভিন্ন সময় দাবি তোলা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। আশ্বাস পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো শুরু হয়নি।’
পািন উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, বাজারটি রক্ষার জন্য দ্রুত আমরা কাজ শুরু করবো। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। আমি ফিল্ড ভিজিট করেছি এবং ভাঙনকবলিত অংশে জরিপ কাজ শেষ করেছি ’

