Site icon Jamuna Television

মাহমুদুল্লাহর ঐ ডেলিভারিটি কি আসলেই ডেড বল ছিল?

ক্রিজের ঠিক কতটা পেছন থেকে বোলিং করা যাবে- তার মাত্রা নির্ধারিত নয় ক্রিকেটে। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টির শেষ ওভারের ‘শেষ বলে’ মাহমুদুল্লাহ ‘ফেয়ার’ ডেলিভারিই করছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পোলার্ড কিংবা তারও আগে ডেনিস লিলিকে এমনটা করতে দেখা গেছে বহুবার। ব্যাটসম্যানকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্য বেশ ভালো টোটকাই!

কিন্তু ব্যাটারের চাইতে যেন বেশি ঘাবড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হলো আম্পায়ারদের জন্যই। একবারে শেষ মুহূর্তে বলটি খেলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ব্যাটার নওয়াজ, বলটি লাগে স্টাম্পে। আম্পায়ারদের দিকে তাকিয়ে দু’পক্ষই। ডেড বল হলে পুনরায় একটি বল খেলার সুযোগ পাবে পাকিস্তান, আর ডেড বল না হলে বাংলাদেশ জিতবে ১ রানে!

খানিক বাদে আম্পায়ারদের দ্বিধার পেন্ডুলাম গিয়ে থামলো ‘ডেড বল’র দিকেই। পরের বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জিতে যায় পাকিস্তান। প্রশ্ন উঠেছে, বলটি আসলেই ডেড বল ঘোষণার দাবি রাখে কিনা।

প্রথমত আসা যাক, ক্রিকেটীয় আইন কী বলে সেই প্রসঙ্গে। আইন বলছে, বল খেলার আগ পর্যন্ত নানা কারণে ব্যাটসম্যান সরতেই পারেন। সামনে দিয়ে কোনো পোকা বা পাখি গেলো, সাইটস্ক্রিনের সামনে বা ওপরে কেউ বা কিছু নড়াচড়া করলো কিংবা মাঠেই কোনো অস্বস্তি- এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ব্যাটসম্যানের যেকোনো সময় সরে দাঁড়ানোর বৈধতা আছে।

এদিকে উপরে উল্লিখিত কোনো গুরুতর অবস্থাই তৈরি হয়নি ঐ ডেলিভারিটির সময়। সেইসঙ্গে মাহমুদুল্লাহ যে কৌশলটি খাটিয়েছেন বোলিং-এর সময়, সেটি ‘বৈধ’ এবং তা না বুঝতে পারা একান্তই ব্যাটারের ব্যর্থতা।

এমতাবস্থায় আম্পায়ারের কাছে পূর্ণ সুযোগ ছিল বলটিকে ‘বৈধ’ ঘোষণা করে আউট দেয়ার। আবার, ব্যাটসম্যান যেহেতু ব্যাট ইচ্ছে করেই চালাননি, সুতরাং কেবল দেরি করার অজুহাতে ঐ বলেই ম্যাচের ফল নির্ধারণ না করতে ‘ডেড বল’ ঘোষণার নৈতিক সুযোগও ছিল। আইসিসির সাইট বলছে, বোলিং প্রান্তের আম্পায়ার একাই যা সিদ্ধান্ত দেবেন, তা-ই চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে আম্পায়ার দ্বিতীয় কাজটিই করেছেন।

এদিকে সে সময় মাহমুদুল্লাহকে নওয়াজ ও আম্পায়ারের সাথে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। শুরুতে দু’ চার কথায় আপত্তির ইঙ্গিত থাকলেও মোটাদাগে এই সিদ্ধান্তকে সহজভাবেই নিতে দেখা গেছে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে। তার সতীর্থরাও সেভাবে উচ্চবাচ্য করেননি। সবাই স্বতস্ফূর্তভাবেই পুনরায় নতুন ডেলিভারির জন্য তৈরি হয়ে যান।

এই ঘটনায় মাহমুদুল্লাহর স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের ভূয়সী প্রশংসা করেন ধারাভাষ্যকারেরা। ক্রিকেটীয় চেতনা অক্ষুণ্ণ রেখে মাঠের সমস্যা দ্রুত মাঠেই মীমাংসা করলেন তিনি, ঠিক যেমনটা নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে পৌঁছানোর আগের ম্যাচে জবাবটা মাঠ ত্যাগ করার বদলে ছক্কাতেই দিয়েছিলেন!

এদিকে মাহমুদুল্লাহ নিজেও ম্যাচ-পরবর্তী বক্তব্যে ‘ডেড বল’ ইস্যু নিয়ে বেশি বাক্যব্যয়ের প্রয়োজন মনে করলেন না। কেবল জানালেন, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং আমরা আম্পায়ারদের সম্মান করি।

Exit mobile version