Site icon Jamuna Television

কিম বড়, না শি বড়?

গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে কিম জং উনের আকস্মিক চীন সফর। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি যখন গোটা বিশ্বজুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছে তখন এই সফর নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা পেয়েছে। সামনে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের সম্ভাবনা আছে কিমের। তার আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে তার সাক্ষাৎ বিশেষ বার্তাই দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দু’রাষ্ট্রপ্রধানের বৈশ্বিক ইমেজ তৈরির জন্য এটি ছিল একটি সুবর্ণ সুযোগ। শান্তির দূত হিসেবে নিজেকে বিশ্বের বৈশ্বিক পরিসরে চিহ্ণিত করার সুযোগ ছিল শি’র সামনে। অন্যদিকে, বিশ্বনেতাদের কাতারে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য বিচ্ছিন্ন কিমের সামনেও একটা সুযোগ ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

দু’নেতার এই সাক্ষাৎকে কীভাবে তুলে ধরেছে দেশদুটির গণমাধ্যম সেটি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। যেখানে উঠে এসেছে মজার সব চিত্র।

চীনের গণমাধ্যমের সংবাদে দেখা গেছে, কিম খুব নিষ্ঠার সাথে শি’র বক্তব্য শুনে তা থেকে নোট নেয়ার চেষ্টা করছেন। বৃহৎ রাষ্ট্রের বর্ষীয়ান রাষ্ট্রনেতা শি’র (৬৪) তুলনায় কিমকে (৩৪) কিছুটা ছোট ও অনুগত হিসেবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা দেখা গেছে চীনা গণমাধ্যমে।

অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যমে কিমকে প্রচুর জনতার মাঝে দেখানো হয়েছে যারা তাকে ঘিরে রয়েছে এবং তার প্রতিটি কথা ধারণ করার চেষ্টা করছে। মি. শি’কে এমন এক সময় জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে যখন কিনা তিনি বৈশ্বিক পরিসরে চীনের প্রভাব বলয় আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন পরিচালক ছিলেন রায়াস হ্যাস, যিনি চীন বিষয়ে কাজ করতেন। তার মতে, এই ধরনের প্রচারণা এই বার্তাই দিচ্ছে যে, নিরাপত্তার জন্য জটিল এক সময়ে চীন চালকের আসনে আছে। এবং কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তারা।

চীনের গণমাধ্যমে যখন কিমকে তুলনামূলক কম বীরত্বপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার গণমাধম্য দেখা গেছে তার বিপরীত প্রবণতা। সেখানে কিমকে সপ্রতিভভাবে শি’র সাথে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে। শি’র মতো একজন ক্যারিশমাটিক ও জ্যেষ্ঠ নেতার সাথে সমানে তাল মিলিয়ে চলতে দেখা গেছে কিমকে।

সেখানকার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেয়া ছবিতে দেখা গেছে কিমের শোভাযাত্রার ছবি। দেখা গেছে মদের গ্লাস হাতে কিমকে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্ভাষণ জানাচ্ছেন শি। চীনের কোনো গণমাধ্যমে এসব ছবি আসেনি।

এটাই বৈশ্বিক পরিসরে মি. কিমের অভিষেক। সে জায়গা থেকে তিনি চেষ্টা করেছেন নিজেকে সম্মানী ও শক্তিশালী নেতা হিসেবে তুলে ধরতে।

তবে দু’দেশের গণমাধ্যমই চেষ্টা করেছে চীন ও উত্তর কোরিয়াকে আদর্শিক সহযাত্রী হিসেবে তুলে ধরতে। একদা মাও সে তুং বলেছিলেন, ‘চীন ও উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ সাম্যবাদী মৈত্রিতা ঠোঁট আর দাঁতের মতো ঘনিষ্ট’। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই সেই হৃদ্যতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দু’দেশের গণমাধ্যম যেন সেটিই খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো।

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘ উত্তেজনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনার টেবিলে বসার কথা চলছে কিমের। এ প্রেক্ষাপটে শি জিন পিং-এর গুরুত্বের মাত্রাই যেন তুলে ধরলো গণমাধ্যম।

যমুনা অনলাইন: টিএফ

Exit mobile version