Site icon Jamuna Television

খেলার সাথে রাজনীতির মেশানোর টেস্টে কি লজ্জা পেয়েছিল পাকিস্তান?

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ৩ জুন এজবাস্টনে শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচ। ইমরান খানের টেস্ট অভিষেক হিসেবে ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই টেস্টের ঐতিহাসিক গুরুত্বের আরও একটি দিক হচ্ছে, বাংলাদেশে চলমান পাকিস্তানের গণহত্যার প্রতিবাদে স্টেডিয়ামের বাইরে সমবেত বাঙালির প্রতিবাদে উচ্চারিত হয়েছিল, অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণাটির কবর হয়ে গেছে। খেলার সাথে রাজনীতি মিশে যাওয়ার ঐতিহাসিক এজবাস্টন টেস্ট খেলতে নেমে সেদিন কি লজ্জা পেয়েছিল পাকিস্তান?

বার্মিংহামের এজবাস্টনে যখন চলছে পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ডের টেস্ট, তখন পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের জঘণ্য ও বর্বরতম গণহত্যা চলছে বাংলাদেশে। স্বাধীনতা তখনও অর্জিত হয়নি। হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের পাশবিকতার শিকার তখন বাংলাদেশ। স্টেডিয়ামের বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের ‘লং লিভ বাংলাদেশ’ স্লোগান; পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে তারা জানাচ্ছে নিজ দেশবাসীর উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ। রক্ত দিয়ে পরনের কাপড়ে ‘পাকিস্তানের পাশবিকতার শিকার’ লিখে হাজির হয়েছেন এক বাঙালি।

ছবি: সংগৃহীত

রাস্তায় উল্টো দিকে পাকিস্তানিরা বিপরীতভাবে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে জানান দেয়ার চেষ্টা করছিল যে, পাকিস্তানিরা সবাই ভাই-ভাই। তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।

উপস্থিত সাংবাদিক পিটার প্ল্যান্ট কথা বলেছেন উভয় পক্ষের সাথেই। একজন পাকিস্তানি বলেন, আমরা পাকিস্তানের ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। পাকিস্তানে অনেক সম্প্রদায় থাকতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের ঐক্যকে সমুন্নত রাখার চেষ্টাই আমরা করছি। অন্যদিকে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তবে যতদূর জানি, পাকিস্তান একটি ভালো দেশ।

উপস্থিত বাঙালিরা বলেন, আমরা এখানে সমবেত হয়েছি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। প্রতিবাদের নিদর্শনস্বরূপ আমরা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের ধারণাটার মৃত্যু ঘটেছে।

পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হচ্ছে স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: সংগৃহীত

পিটার প্ল্যান্ট তখন বলেন, পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উপস্থিত জনতা ক্রিকেট এবং রাজনীতিকে আলাদা করে দেখার পক্ষপাতী। এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? উপস্থিত বাঙালি বলেন, রাবিশ! এটা সম্পূর্ণ বাজে কথা। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক আমাদের দেশের নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের উপর এখন চলছে গণহত্যা। এখানে ক্রিকেট হোক আর যাই হোক, গণহত্যার বিপক্ষে অবস্থা নেয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না অন্য কিছুই।

এজবাস্টনে স্টেডিয়ামের বাইরে ঐতিহাসিক সেই প্রতিবাদের উচ্চারণ সবাইকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছিল যে, পাকিস্তান মোটেও কোনো স্বাভাবিক সময়ে টেস্ট খেলছে না। নিজের দেশের মানুষ গণহত্যার শিকার হওয়ার সময় ক্রিকেট খেলা কোনোমতেই মানবিক হতে পারে না। আর এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেট খেলাটাকে যারা স্বাভাবিক মনে করে এবং ক্রিকেট ও রাজনীতিকে দেখতে বলে পৃথকভাবে; তবে সেটা আর যাই হোক নিজ দেশ হতে পারে না। রণাঙ্গনের যুদ্ধের পাশাপাশি প্রবাসীদের এমন প্রতিবাদী ভূমিকায়ও ত্বরান্বিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

Exit mobile version