Site icon Jamuna Television

ভিসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি, মামলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে

একদফা দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি, আন্দোলন গড়িয়েছে ষষ্ঠ দিনে।

পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলননরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। হল ত্যাগের নির্দেশ অমান্য করে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। ষষ্ঠ দিনে গড়ানো এ আন্দোলনে ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে অনড় রয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনটি শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা সেই মিছিলে দলে দলে যোগ দেয় হলের ছাত্র-ছাত্রীরা। গোলচত্বরে জমায়েত হওয়া মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা যায় উপাচার্য ভবনের সামনে। ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবি নিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণের জন্য লেখা হয়েছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, দিন যতোই যাক, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি পালন করে যাবো। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ভাই-বোনদের ওপর যে হামলা হয়েছে; সেই হামলার নির্দেশ যিনি দিয়েছেন সেই ভিসিকে আমরা চাই না।

ক্যাম্পাস যখন স্লোগানে উত্তাল তখনই শিক্ষার্থীরা জানতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। জালালাবাদ থানার এসআই মো. আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে আসামি করেছেন অজ্ঞাত দুই-তিনশত শিক্ষার্থীকে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ, পুলিশকে আহত করা, পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করার কারণে ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এসআই মো. আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

মামলার এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, এটা পরিষ্কার মিথ্যাচার। যে জায়গায় আমরা বই-খাতা নিয়ে ঢুকি সেখানে কীভাবে অস্ত্র পাবো আমরা! আমাদের মধ্যে কেউ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেনি।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, সেখানে কোত্থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছে তা স্পষ্ট দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের হাতে গুলি পাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, হাস্যরস সৃষ্টি ছাড়া এর অন্য কোনো অর্থ নেই।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ স্থানীয় নেতারা। পরে ভিসির সাথে দেখা করেন তারা। পুলিশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, প্রশাসন যেন কোনোভাবেই কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তারা যেন সহনশীল মনোভাব পোষণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পূরণ করা হয়, সে চেষ্টাই করবো আমরা।

আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান চান শিক্ষকরা। শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুলসী কুমার বলেন, আমরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান করতে চাই। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও একই মত প্রকাশ করেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই একটি সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

জানা গেছে, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে হল ছাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ এসেছে। হলে পানির সরবরাহ বন্ধ করার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন। তবে শিক্ষার্থীরা একদফা দাবিতে অনড় রয়েছেন। তারা মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণের আগে আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল প্রভোস্টের পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রীরা। রোববার (১৬ জানুয়ারি) আন্দোলনরতদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। এরপর ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে দানা বাধে শিক্ষার্থী আন্দোলন।

আরও পড়ুন: ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আজও উত্তাল শাবিপ্রবি

Exit mobile version