Site icon Jamuna Television

নিপা রানী সমাহিত হবে মুসলিম রীতিতেই

আতিয়ার বাড্ডা, নীলফামারী

আইনি জটিলতায় চার বছরের অধিক সময় ধরে মর্গে থাকা ধর্মান্তরিত নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের লালার খামার এলাকার হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলামি ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে মরদেহ দাফন করতে হবে। নীলফামারীর জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। দাফনের আগে হোসনে আরা (নিপা রানীর) মরদেহ তার বাবার পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নিপা রানী রায়। তার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির লাজুর প্রেম ছিল। তারা ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। ধর্মান্তরিত হবার পর নিপার নতুন নাম হয় হোসনে আরা। সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু বাধঁসাধে নিপার পরিবার। বিয়ের পর মেয়ের বাবার অভিযোগে ছেলে-মেয়ে দুজনকেই জেল হাজতে নেয়া হয়। পরে তারা মুক্তি পান। কিছুদিন পর হুমায়ুন কবির লাজু মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে হোসনে আরা লাইজু (নিপা রানী) আত্মহত্যা করে।

নিপা রানীর মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। সেখানে ময়না তদন্তের পর ২০১৪ সালের ১০ মার্চ থেকে মরদেহটি হিমঘরে পড়ে আছে। মরদেহটি নিজের মেয়ের বলে দাবি করেন হিন্দু বাবা, আর পুত্রবধূ হিসেবে দাবি করেন মুসলমান শ্বশুর। ভালবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে মরদেহ নিয়ে এমন আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন ছেলে ও মেয়ের পরিবার। মেয়ের বাবা অক্ষয় কুমার নীলফামারী সদর কোর্টে মেয়ের মরদেহ চেয়ে মামলা করেন। কিন্তু মামলার রায়ে অক্ষয় কুমার হেরে যান। পরে তিনি সাব জজ আদালতে আপিল করেন। সেখানে ছেলের বাবা জহুরুল ইসলাম হেরে যান। এর পর ছেলের বাবা হাইকোর্টে আপিল করেন। মরদেহের দুজন দাবিদার হওয়ায় সেখানেও সৃষ্টি হয় আইনি জটিলতা। মামলাটি বিচারিক আদালত ঘুরে হাইকোর্টে আসে। রংপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারেনি।

আজ বৃহস্পতিবার হোসনে আরার (নিপা রানী) মরদেহ ইসলামি ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন করার নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত। আদালতে মেয়ের বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার। ছেলের বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা।

রাজুর বাবা জহুরুল ইসলাম পুত্রবধূর মরদেহ দাফনের অনুমতি পেয়ে হাইকোর্টের এ রায়ে জানান, তার ছেলে ভালোবেসে নীলফামারী আদালতে এফিডেভিট করে নিপাকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ছেলে-মেয়ে দুজনই মারা গেছে। আমার ছেলে এক সাথে থাকতে না পেরে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেছে অন্তত তাকে আমার ছেলের কবরের পাশে দাফন করে তাদের এক করে দিতে পারবো। এতেই আমার শান্তি।

Exit mobile version