Site icon Jamuna Television

৬ আসামি বেকসুর খালাস, নিখোঁজ জয়নাল কোথায়?

খালাসপ্রাপ্ত ৬ আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ফেনী:

নিখোঁজের ৯ বছরেও সন্ধান মেলেনি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিক্সা চালক জয়নাল আবেদীনের। এ ঘটনায় অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার ৬ আসামিকেই বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছা এ রায় দেন। এসময় ৫ আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও একজন পলাতক ছিলেন। রায়ের পর পর তাদের মধ্যে উৎফুল্লতা দেখা গেছে।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, নাছির উদ্দিন (লিটন), ইসমাইল হোসেন (দুলাল), সিরাজুল ইসলাম (মাস্টার), দুলাল হোসেন (খোকন), নাজমুল হক (নয়ন) ও মো. নুর করিম।

মামলার রায় বিশ্লেষণে আদালত বলেছে, বাদীপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে না পারায় নির্দোষ হিসেবে ৬ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। এমন রায়ে বাদীপক্ষ ও বাদীপক্ষের আইনজীবী হতাশ হয়েছেন।

বাদী নিখোঁজ জয়নাল আবেদীনের পিতা মুক্তিযোদ্ধা সেরাজুল হকের দাবি, তাহলে আমার ছেলে কোথায়? আমার নিখোঁজ ছেলের সন্ধান কী পাবো না? কে সন্ধান দেবে?

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ জানান, ৬ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। জয়নালকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে। ঘটনার ৫ দিন পর তার পরনের জ্যাকেট উদ্ধারের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আসামিরা তাকে একটি দোকান থেকে তুলে নিয়ে অপহরণ করে হত্যা করেছে। আসামিদের সাথে জয়নালদের জায়গা-জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধ ছিল। সে বিরোধের জেরে একটি মামলা হয়েছিল। সে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো আসামীরা। একসময় হত্যার হুমকিও দেয় তারা। এই আসামিরা তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি তার।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হানিফ মজুমদার বলেন, বিচারক ৬ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি। জয়নাল আত্মগোপনও করতে পারে। হত্যামামলা হলেও কোনো পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নেই। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে অনুমান নির্ভরভাবে আসামি করা হয়েছে। তাই মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

আদালতের নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ির পাশে বাঁধের চায়ের দোকান থেকে নিখোঁজ হন জয়নাল। এরপর, ১২ জানুয়ারি বড় ফেনী নদীর তীরে জয়নালের পরনে থাকা জ্যাকেট পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জয়নালের বাবা সেরাজুল হক বাদি হয়ে ১৮ জানুয়ারি ৪ জনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন জ্যাকেট উদ্ধারের সূত্র ধরে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। একই বছরের ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।

এ মামলার রায়ের পর সেরাজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ছেলে নিজাম উদ্দিন জানান, আমার বাবার বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি। হাঁটতে চলতে পারেন না। কথাও স্পষ্ট নয়। তবে আসামিরা খালাস পাওয়াতে তিনি হতাশ হয়েছেন। বারবার আক্ষেপ করে বলছেন নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পেলাম না।

বাদি সেরাজুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসামিরা যদি নির্দোষ হয় তাহলে আমার ছেলে কোথায়? বিগত ৯ বছরে অপেক্ষা করছি ন্যায় বিচারের জন্য আজ আসামিদের নির্দোষ বলে খালাস দেয়া হয়েছে। তাহলে কী আমার ছেলে বেঁচে আছে? আমার ছেলেকে কে এনে দিবে? রাষ্ট্রের কাছে, সমাজের কাছে, বিচারকের কাছে আমার ছেলে ফেরত চাই।

নিখোঁজ জয়নাল আবেদীনের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। এই আসামিরা আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারাই মেরে ফেলেছে। শুধুমাত্র আইনের ফাঁক-ফোকরে আমরা বিচার পাইনি। আসামিরা যদি নির্দোষ হয় তাহলে আমার ভাই নিশ্চয় বেঁচে আছে। কার কাছে আছে?

আইনজীবী ফয়জুল হক মিল্কী বলেন, আসামিরা নির্দোষ বলে খালাস পেয়েছেন। আবার সেরাজুল হক তারা ছেলেকে ফেরত পাননি। আসামিরা নির্দোষ যদি হয় তাহলে জয়নাল কোথায়?

এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ এই আইনজীবীর দাবি এখন রাষ্ট্র জয়নালের নিখোঁজের বিষয়টি মীমাংসা করবে। এক বাপ তার ছেলের খোঁজ পেলেন না। তাকে আজীবন এই আক্ষেপ নিয়ে মরতে হবে। এ মামলায় কোথায় কী দুর্বলতা ছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে দুর্বলতা ছিল। অভিযোগ পত্রেও সমস্যা ছিল। যে সিএনজি করে আসামিরা অপহরণ করেছে সে সিএনজির খোঁজ করার দরকার ছিল। মামলার তদন্তে সেলুন দোকানদারের নাম আসলেও তাকে স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়নি বলেও জানান তিনি।



/এসএইচ

Exit mobile version