Site icon Jamuna Television

ধান এখন চিটা, কৃষকের মাথায় হাত

কামাল হোসাইন, নেত্রকোণা

নেত্রকোণার ৯ উপজেলার বিআর ২৮ জাতের জমিতে ‘নেকব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলায় এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। শুধু মাত্র হাওর উপজেলা খালিয়াজুরি ছাড়া বাকি নয় উপজেলাতে বিআর ২৮ জাতের জমিতে ধান পাকার আগ মুহুর্তে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। আক্রান্ত জমিতে ধানের চাল দেখা যাচ্ছে না।

জেলা কৃষিবিভাগ সূত্র মতে, এ পর্যন্ত ১ শ ৩০ একর জমি নেকব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ একর জমি। আক্রান্ত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে রংছাতি, খারনৈ, বড়খাপন ও কলমাকান্দা সদর।

কলমাকান্দা উপজেলার স্থানীয় কৃষকরা জানান, আক্রান্ত হওয়ার শুরুতে পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা গেছে। পরে দাগগুলো লম্বা হয়ে চোখাকৃতি রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত ধান গাছের মধ্যভাগ ছাই রঙের এবং বাইরের দিক গাঢ় বাদামী রঙের হয়। এক পর্যায়ে পুরো পাতাসহ কান্ড ও শীষ আক্রান্ত হয়ে ধানের ভেতর চাল হচ্ছে না।

কলমাকান্দা উপজেলার গুতুরা এলাকার কৃষক দুলাল মিয়া জানান, গত বছর আগাম বন্যার পর কৃষি বিভাগের লোকজন আগাম জাতের ধান বিআর ২৮ জাতের ধান লাগানোর পরামর্শ দেন। এজন্য আমরা এই জাতের ধান রোপন করে এখন সর্বনাশ হয়েছে।

বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া জানান,আমরা বীজ কিনতে গেলে কৃষি কর্মকর্তা বিআর ২৯ জাতের বীজ না দিয়ে বিআর ২৮ জাতের ধান লাগানোতে এখন এক মুঠো ধান পাবো না। সব ধানের ভেতর চাল নেই। গত বছরও আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার কি করবো?

কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘নেকব্লাস্ট’ ছত্রাকজনিত রোগ। পাহাড়ী এলাকার মাটিতে এর জীবাণু অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। কলমাকান্দা পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় আক্রমণ কিছুটা বেশি। এছাড়া সাম্প্রতিক বৃষ্টির পর এ জীবাণু বেশি ছড়িয়েছে। এক ক্ষেত থেকে তা দ্রুত অন্য ক্ষেতে ছড়িয়ে যায়। এছাড়া তাপমাত্রার ওঠা-নামার সঙ্গেও এ রোগের সম্পর্ক আছে। রোগাক্রান্ত ধান গাছের খাদ্য ও পানি গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ধান চিটায় পরিণত হয়।

তিনি আরও জানান, বিআর-২৮ জাতের ধানে নেকব্লাস্ট-এর আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। গেলবারের অকালবন্যার পর এ অঞ্চলের কৃষকদের বিআর-২৮ জাতের ধান আবাদেই বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে। আক্রান্ত জমির পরিমাণ খুব বেশি না হলেও তা কাঙ্খিত ফলনের কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে বলে স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল জানান, নেকব্লাস্ট-এ বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জমি আক্রান্ত হয়েছে। তবে তা পরিমাণে খুব বেশি নয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য আমরা কৃষকদের জমিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ ‘নেটিভো’ ও ‘ট্রুপার’ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। বেশিরভাগ কৃষক স্প্রে করেছেন। আশা করা যায় অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

Exit mobile version