Site icon Jamuna Television

যৌনপল্লি থেকে উঠে আসা এক ‘বেগম রোকেয়া’

ছিলেন যৌনপল্লির অন্ধকার জীবনে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রতিদিন। অদম্য শক্তিতে সে জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছেন রাজবাড়ির মর্জিনা। আজও লড়ে যাচ্ছেন যৌনপল্লির নারী ও শিশুদের জন্য। আদায় করেছেন শিক্ষা থেকে শুরু করে কবরস্থানে জায়গা পাওয়ার অধিকার। প্রায় দুই যুগের চেষ্টায় মর্জিনা এখন মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিন সন্তানের জনকের সাথে বিয়ে হয়েছিল মর্জিনার। সংসার করা হয়নি। স্বামীর নির্যাতনে ফিরতে হয় ফরিদপুরে নানার বাড়িতে। সেখানকারই এক দালাল তাকে সিরাজগঞ্জ পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। ১৯৮৮ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় মর্জিনাকে। তখন থেকেই মনে হাজারটা প্রশ্ন তার। যৌনকর্মীরা কেন সঠিক চিকিৎসা পাবে না? তাদের শিশুরা কেন যেতে পারবে না স্কুলে? কেনই বা মরে গেলে সামান্য কবরটুকুও পাবে না তারা?

এতসব প্রশ্নের উত্তর তার নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯৯৮ সালে গঠন করেন মুক্তি মহিলা সমিতি। এই সংগঠনের আওতায় বর্তমানে ১৬০ জন শিশুর পাঠদান ও যৌনকর্মীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ চলছে। মর্জিনা জানালেন, এই সমিতিতে প্রশিক্ষণার্থী যৌনকর্মীদের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ইত্যাদি পালন, সেলাই ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের যৌনবৃত্তি থেকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা হয়।

১৯৯৯ সালে সমাজসেবা, ২০০৯ সালে এনজিও ব্যুরো ও ২০১৮ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অনুমোদন পায় মুক্তি মহিলা সমিতি। রেজিস্ট্রেশনের পর বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থ সহায়তায় যৌনপল্লির নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মর্জিনা। জানালেন, এই উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে নানা রকম বাধা এসেছে, এসেছে নির্যাতন। তবু তিনি চান কোনো বৈষম্যের শিকার না হোক নারীরা। নিশ্চিত হোক শিশুদের আলোকিত ও সুন্দর ভবিষ্যৎ।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মর্জিনা ও তার সংগঠন অর্জন করেছেন জয়িতা সম্মাননা, কবি নজরুল সম্মাননা, স্বাধীনতা সংসদ সম্মাননা ও শেরেবাংলা স্বর্ণপদক।

/এডব্লিউ

Exit mobile version