Site icon Jamuna Television

মোদি আমলে নেতাদের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বেড়েছে ৫ গুন

নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ভারতে শীর্ষ রাজনীতিকদের ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের পরিমাণ প্রায় ৫ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের কংগ্রেস সরকারের চেয়ে মোদির বিজেপি সরকারের সময় ব্যাপক হারে বেড়েছে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নিয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য।

ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা মন্তব্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। বিধানসভার সদস্য, লোকসভার সদস্য, মন্ত্রী, বিজেপির সভাপতি—কেউই বাদ যাননি ‘হেট স্পিচ’ দেয়া থেকে। ঘৃণা ছড়ানো মন্তব্য বাড়লেও এর জন্য মন্তব্যকারীদের শাস্তির তেমন একটা নজির নেই।

এনডিটিভি সেসব মন্তব্যকেই গণ্য করেছে, যেগুলো কোনো সম্প্রদায়, জাতিকে খাটো করে করা হয়েছে এবং হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির অন্তত তিনটি ধারায় মন্তব্যগুলো দণ্ডযোগ্য। তবে এখানে বাঁকা কথা বা নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার এবং ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইউপিএ সরকারের সময় করা মন্তব্যগুলো বিবেচনায় নিয়েছে এনডিটিভি। এ সময়ে মোট ১ হাজার ৩০০ প্রতিবেদন এবং টুইটারে করা ১০০০ বার্তা বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা গেছে, ২০১৪ সালের মে মাস থেকে চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ১২৪ বার ঘৃণামিশ্রিত বক্তব্য ছড়িয়েছেন। ৪৪ জন রাজনীতিক এসব কথা বলেছেন। অন্যদিক, আগের কংগ্রেস সরকারের সময় এ ধরনের বাক্যের সংখ্যা ছিল ২১। অর্থাৎ, মোদি সরকারের সময় ঘৃণা ছড়ানো বাক্যের সংখ্যা বেড়েছে ৪৯০ শতাংশ।

মোদি সরকারের সময় যে ৪৪ রাজনীতিক ঘৃণামিশ্রিত কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনকে সাবধান করে দেওয়া বা ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে কোনোরূপ জরিমানা দিতে হয় না বা তাঁদের কোনো শাস্তিও হয় না।

যোগী আদিত্যনাথ এখন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আগে লোকসভার সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘শাহরুখ খান ও হাফিজ সাইদের কথার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওই আদিত্যনাথই বলেন, উত্তর প্রদেশে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা বাড়ার কারণ সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বৃদ্ধি। এসব ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে যোগী আদিত্যর কোনো জরিমানা হয়নি; বরং এমপি থেকে মুখ্যমন্ত্রীতে পদোন্নতি হয় তাঁর।

২০১৬ সালে কর্ণাটক থেকে নির্বাচিত বিজেপির এমপি অনন্ত কুমার হেগড়ে বলেন, বিশ্বে যত দিন পর্যন্ত ইসলাম থাকবে, তত দিন সন্ত্রাস বন্ধ হবে না। ২০১৭ সালে হেগড়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। ২০১৪ সাল থেকে একের পর ঘৃণা ছড়ানো কথা বলে বেড়িয়েছেন হেগড়ে।

তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিং গত বছরের নভেম্বরে হুমকি দেন, ‘পদ্মাবতী’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শন করা হলে প্রেক্ষাগৃহ পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো ধর্মের মানুষ যদি কিছু বলে, তবে প্রতিটি হিন্দুর উচিত হাতে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করা।’

ভারতে গত ৯ বছরে যত ঘৃণামিশ্রিত কথা হয়েছে, এর বড় একটি অংশই হয়েছে গরু রক্ষার নামে। গত বছর এপ্রিলে ছত্তিশগড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিং বলেন, ‘এ রাজ্যে গরু হত্যার মতো কোনো ঘটনা ঘটে না। যারা এমন ঘটনা ঘটাবে, তাদের ঝুলিয়ে মারা হবে।’

গত বছর উত্তর প্রদেশের বিধায়ক বিক্রম সাইনি বলেন, ‘যারা গরুকে তাদের মা হিসেবে মনে করবে না, আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তাদের হাত-পা ভেঙে দেব।’

রাজস্থানের বিজেপি বিধায়ক জ্ঞানদেব আহুজা বলেন, ‘আমি পরিষ্কার বলছি, কেউ যদি গরু চোরাচালান বা গরু হত্যা করে, তবে তাদের মেরে ফেলা হবে। গরু আমাদের মা।’

ঘৃণা ছড়ানোর একটি বড় অংশজুড়ে আছে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য। জানুয়ারিতে উত্তর প্রদেশের এক বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘যেসব মুসলিম আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারবে, তারাই কেবল ভারতে থাকবে। যারা তা করতে পারবে না, তারা অন্য দেশে চলে যেতে পারে।’

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও কখনো কখনো এমন কথা বলেছেন, যার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত থেকেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর প্রদেশের ফতেহপুরে এক নির্বাচনী সমাবেশে মোদি বলেন, ‘রমজান মাসে যদি বিদ্যুতের সরবরাহ থাকতে পারে, তবে দিওয়ালির সময়ও থাকতে হবে। কোনো বৈষম্য করা যাবে না।’

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তখনকার এমপি রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ২২ হাজার মানুষ মারা পড়বে। ওই বছরের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস নেতা ইমরান মাসুদ বলেন, ‘মোদি যদি উত্তর প্রদেশকে গুজরাট বানাতে চান, তবে তাঁকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলব।’

Exit mobile version