Site icon Jamuna Television

ঢাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যক্রম স্থগিত, অভিযুক্ত ধর্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যক্রম স্থগিত করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদ।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকিফ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আসে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আকিফ একটি স্বীকারোক্তিমূলক পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। অভিযোগ ও স্বীকারোক্তি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের ৩৪-তম কার্যনির্বাহী পরিষদের দ্বিতীয় সভায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক অভিযুক্ত আকিফকে ২১ মার্চ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে কার্যক্রম স্থগিত করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। এছাড়া অভিযুক্ত ধর্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের দাবিও তুলেছেন তারা। বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ।

বিবৃতিতে উল্লেখিত মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তসমূহ:

মূল্যায়ন:

১. অভিযুক্তকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ থাকাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়। কিন্তু এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব থাকার কোনো অধিকার নেই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এতদিনেও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত আকিফ আহমেদের ছাত্রত্ব বাতিলের কোনো দাবি করেনি। এরমধ্য দিয়ে অভিযুক্তের প্রতি সুস্পষ্ট নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়েছে।

২. কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি) সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। কেবল ফেসবুক পেজে পোস্ট করে দায় সারার চেষ্টা করা হয়। যেখানে সংগঠনের প্যাড, দফতর সম্পাদকের স্বাক্ষর ও তারিখ ব্যবহার করা হয়নি।

৩. ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়, যার ফলে ভিকটিম ব্লেমিং এর সুযোগ করে দেয়া হয়। তাতে অপরাধকে লঘুভাবে উপস্থাপনের প্রয়াসও লক্ষণীয়। উক্ত ফেসবুক পোস্টে বিভিন্ন ব্যক্তি ভিকটিমের জন্য মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করলেও পোস্টটি সরিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত সেসব মন্তব্যের একটিও মুছে ফেলা হয়নি।

৫. ভিকটিম ব্লেমিং এর বিষয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রথম ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নিয়ে আরেকটি পোস্ট প্রদান করা হয়। সেবারও আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ প্রদানের প্রয়োজন বোধ করেনি ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি সংসদ।

সর্বশেষ তৃতীয় আরেকটি পোস্টের অবতারণা করে প্রথম পোস্টে দেয়া বিতর্কিত বক্তব্যের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। একই সাথে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ পায় এমন তথ্যও সরবরাহ করা হয়। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ করা বাংলাদেশের আইনে অপরাধ ও ছাত্র ইউনিয়নের নীতি-বিরুদ্ধ একটি কাজ। এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা পর্যন্ত উক্ত ফেসবুক পোস্ট অপসারণ কিংবা ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশের জন্য কোনো প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করে কোনো বিবৃতি দেয়নি ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি সংসদ।

৬. অভিযোগ গ্রহণের তারিখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করা হয়। ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ গ্রহণের তারিখ ২০ মার্চ উল্লেখ করলেও ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক একটি গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে ১৪ মার্চের কথা বলা হয়। এছাড়াও অভিযোগকারী ঢাবি সংসদের বিগত কমিটির কাছে প্রথম অভিযোগ করেছে বলে উক্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়। এটি সত্য হয়ে থাকলে বিগত কমিটির নেতৃবৃন্দ ধর্ষণের মতো ঘটনায় নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করেছিল বলে বিবেচ্য হবে। যা ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ ও সাংগঠনিক নীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন।

সিদ্ধান্তসমূহ:

১. পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের বর্তমান কমিটি স্থগিত থাকবে।

২. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক ইমেইল ও ফেসবুক পেজ কেন্দ্রীয় সংসদ বরাবর বুঝিয়ে দিতে হবে।

৩. ছাত্র ইউনিয়নের নিপীড়ন বিরোধী সেল এ ঘটনায় তদন্ত করবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তারা কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী বরাবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৪. অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দাবি জানাচ্ছে। অভিযোগকারী যদি কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান, সেক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।

/এসএইচ

Exit mobile version