Site icon Jamuna Television

দেশের ফুটবলে পাতানো ম্যাচ, জড়িত কাওরান বাজার প্রগতি সংঘ

মামুনুর রশিদ, স্টাফ রিপোর্টার:

কাওরান বাজার প্রগতি সংঘ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের গত আসরে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে ছিল। আর চলতি আসরে সাত ম্যাচের ছয়টিতে হেরেছে। এক আসরের ব্যবধানে কেনো এমন অবস্থা হলো দলটির?

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ফিক্সিংয়ে জড়িত ক্লাবটি। তাতে যুক্ত কোচ, ম্যানেজার থেকে দলের ফুটবলার। বাংলাদেশের ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর হিসেবে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চলে কোটি টাকার জুয়া। এ জুয়ার আসর অনলাইনে চলে দেশে-বিদেশে। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ নিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন কাওরান বাজার প্রগতি সংঘ সংশ্লিষ্ট একজন। জানিয়েছেন, নিজে ম্যাচ পাতিয়েছেন, এখন ভুগছেন অপরাধবোধে।

ওই ব্যক্তি জানান, কথা মতো কাজ করলে খেলোয়াড়দের ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। পেনাল্টি নিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা। অনলাইনে জুয়ার বোর্ড খোলা হয়, প্রায় ৫ কোটি টাকায়। প্রতি ম্যাচে দেশের বায়াররা পায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা। বিদেশে আয় হয় কোটি কোটি টাকা।

ক্লাবটির ফুটবলাররা যেন হাতের পুতুল। ক্লাব থেকেই জানানো হয় ম্যাচ ছেড়ে দিতে। বিনিময়ে মিলবে অর্থ। প্রস্তাবে রাজি না হলে বাদ পড়তে হবে দল থেকে। আলাদা আলাদা বিভাগে দাম নির্ধারণ করা হয় ফুটবলার থেকে কোচ-ম্যানেজারসহ অন্যান্যদের।

স্বীকারোক্তিতে ক্লাবটির সংশ্লিষ্ট ওই ব্যক্তি বলেন, খেলোয়াড়দের প্রতি থাকে এমন নির্দেশনা, আমরা ২-৩টা ম্যাচ যেভাবে বলবো সেভাবে খেলতে হবে। বায়ারের সঙ্গে কথা হইছে, ম্যাচ ফিক্সিং হইছে। প্রথমার্ধে দুই গোল, দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল খাবা। সেকেন্ড লিগ ওরা আমাদের ছেড়ে দিবে।

জানা গেছে, গোল করারও একটা সময় থাকে। নেমেই ১৫-২০ মিনিট লড়তে হয়। তারপর সংকেত দিলে গোল হজম করতে হয়। ১১ জন ফুটবলারকে ৫ হাজার ডলার, অফিশিয়ালদের ১৬ লাখ আর কোচ পায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে যমুনা নিউজ কথা বলার চেষ্টা করে দলটির কোচ রেজাউল হক জামালের সঙ্গে। এ অভিযোগের বিষয়ে রাজধানীর কমলাপুরে কথা বলবে বলেও স্থান থেকে সরে পড়েন এই কোচ। পরে মুঠোফোনে কথা হলে আক্রমণাত্বক আচরণ করেন এই কোচ।

রেজাউল হক জামাল বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার নামে অভিযোগ করবে, এমন কেউ এখনও পয়দা হয়নি। আমার সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনার?

এরপর যোগাযোগ করা হয় ক্লাবটির সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না বললেও আর্থিক কারণে কিছু দিন আগে দলের ম্যানেজারকে বরখাস্ত করার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এমন কিছু হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছুদিন আগে ক্লাবের ম্যানেজারকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফুটবলারদের একসঙ্গে রাখার কথা থাকলেও সে দুই ভাগে আলাদা করে রাখতো।

কাওরান বাজার প্রগতি সংঘের সভাপতির বক্তব্যে স্পষ্ট বুঝা যায়, ক্লাবটির ফুটবল দল পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল।

উল্লেখ্য, কাওরান বাজারের কোথাও ক্লাবটির কোনো অস্তিত্ব নেই। আর দলটি কিনা খেলছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। ১৯৮৫ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কাওরান বাজার প্রগতি সংঘের কার্যক্রম চলে ক্লাবের সভাপতি মোশাররফ হোসেনের ‘কাওরান বাজার পাঁচতারা সমন্বয় আড়ৎদার বহুমুখী সমবায় সমিতি’ ঘরেই।

/এমএন

Exit mobile version