Site icon Jamuna Television

মৃত মানুষ কেন নড়ে ওঠে?

দাফনের আগে হঠাৎই নড়ে ওঠে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে নবজাতক মিম। সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মের পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অশ্রুসিক্ত বাবা আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যান দাফনের জন্য। গোসল করানোর সময় নবজাতকটি হঠাৎ নড়ে ওঠে। সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউতে রেখে তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন মিম এরপর থেকেই আলোচনা- কেন এমন ঘটে? মৃত ঘোষিত শিশুটি কীভাবে বেঁচে ওঠেছিল? এর মেডিকেলীয় ব্যাখ্যাই বা কী?

এর ব্যাখ্যায় প্রথমেই পরিচিত হতে হবে ‘লেজারাস সিনড্রম’ বা ‘লেজারাস ফেনোমেনন’ নামক প্রত্যয়ের সাথে। সহজ ভাষায়, সৎকার কাজের সময় কোনো মৃত মানুষের নড়ে উঠাকে বলা হয় ‘লেজারাস ফেনোমেনন’। নিউ টেস্টামেন্টে লেজারাস নামক মৃত ব্যক্তিকে যীশু খ্রিস্ট বাঁচিয়ে তুলেছিলেন বলে উল্লেখ আছে। সেখান থেকেই ‘লেজারাস ফেনোমেনন’ প্রত্যয়ের উৎপত্তি।

পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ খুবই কম। সাকুল্যে ৫০’র মতো। প্রায় সবই পাশ্চাত্য দেশগুলোতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনার তো বিরল। নানা ধরনের গল্প শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগেরই সত্যতা মেলেনি। আলোচিত শিশু মিমের ঘটনাটি বাংলাদেশে ‘লেজারাস ফেনোমেনন’র আদর্শ উদাহরণ বলা যেতে পারে। যেহেতু দু’ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কলম্বিয়ায় ৪৫ বছর বয়সী এক নারী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলাকালে নড়ে উঠেন। পরে হাসাপাতালে পাঠানো হয় তাকে। এই নারী স্বল্প সময়ের আয়ু পেয়েছিলেন। তবে, ‘কার্ডিওপালমোনারি রিসাসসিটেশন’র ফলে বেঁচে ওঠা ২৭ বছরের এক ব্রিটিশ তরুণের পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠার কথা জানাচ্ছে উইকিপিডিয়া। মাত্রাতিরিক্ত হেরোইন ও কোকেন গ্রহণের ফলে তার হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করে প্রায় ২৫ মিনিট চেষ্টার পর চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সচল হয়ে ওঠে তার হৃৎযন্ত্র। তিনি দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও অঙ্গরাজ্যের ৩৭ বছর বয়সী অ্যান্থনির ঘটনা তো সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। এক সকালে ঘুম থেকে ওঠে শ্বাস নিতে পারছিলেন না অ্যান্থনি। দ্রুতই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সিপিআর দেয়াসহ সহ নানা চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। ৪৫ মিনিট চেষ্টার করেও তার হার্টবিট পাওয়া যায়নি। মৃত ঘোষিত অ্যান্থনিকে দেখতে তার পুত্রসন্তান হাসপাতালে আসেন। তখনি সে দেখতে পায় বাবা নড়ে উঠেছেন। পরে পুনরায় চেষ্টা শুরু করেন চিকিৎসকরা। বেঁচে ওঠেন অ্যান্থনি। নিঃসন্দেহে এমন ঘটনার সংখ্যা বিরল।

‘লেজারাস ফেনোমেনন’ এর কারণ ব্যাখ্যা যথেষ্ট কঠিন।

এরকম আরও বেশ কয়েকটি কারণে মৃত ঘোষিত ব্যক্তি বেঁচে উঠতে পারে বা নড়ে ওঠে। এমন ঘটনায় যদি কেউ ফিরেও আসে তবে তাকে স্নায়ুবিক জটিলতাসহ নানা রকমের শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। যদিও, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার মেডিকেলীয় নজির বিরল।

যমুনা অনলাইন: টিএফ

Exit mobile version