Site icon Jamuna Television

দেশের ফুটবলে ম্যাচ পাতাতে হোটেলের কর্মচারীকে ভুয়া গোলরক্ষক সাজার প্রস্তাব!

মামুনুর রশিদ, স্টাফ রিপোর্টার:

৭ মার্চ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ফরাশগঞ্জ স্পোটিং ক্লাবের মুখোমুখি কাওরান বাজার প্রগতি সংঘ। আক্রমণে গিয়েও গোলপোস্টে শট না নিতে দেখা গেছে কাওরান বাজার প্রগতি সংঘের ফুটবলারদের। এমন দৃশ্য দেখে মনে হতেই পারে ম্যাচে এটি ঘটতে পারে।

তবে, এরপরে ম্যাচের দৃশ্য পাল্টে যায়। ঠিক ১৫ মিনিটের পর কাওরান বাজারের জালে গোল। এর দুই মিনিট পর আরও এক গোল। গোলগুলো চোখে শান্তি জুড়ায়, কিন্তু এর পেছনেই লুকিয়ে আছে ফিক্সিং। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তা স্বীকার করেছেন কাওরান বাজার প্রগতি সংঘ সংশ্লিষ্ট একজন। জানিয়েছেন, নিজে ম্যাচ পাতিয়েছেন, এখন ভুগছেন অপরাধবোধে।

ওই ব্যক্তি বলেন, গোল করারও একটা সময় থাকে। নেমেই ১৫-২০ মিনিট লড়তে হয়। তারপর কোচ বা ম্যানেজার সংকেত দিলে গোল হজম করতে হয়।

কাওরান বাজারের ক্লাবটি গত ১০ মার্চ পরের ম্যাচ খেলে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের বিপক্ষে। ওই ম্যাচেও দুই দলের মধ্যে লড়াই চলছিল সমানে-সমানে। কিন্তু হুঠ করে ছন্দপতন ঘটে কাওরান বাজার প্রগতি সংঘের। ফুটবল মাঠে নেমে গোল হজম করতে হবে, এটি আশ্চর্যের কিছু না। কিন্তু ডিফেন্ডার যখন প্রায় দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে গোল হজমের দৃশ্য দেখে, তখনই জাগে সন্দেহ, ওঠে প্রশ্ন!

এ ব্যাপারে ওই ব্যক্তি বলেন, ম্যানেজার ফুটবলারদের বলেছে লিগের পরের লড়াইয়ে ওরা আমাদের ম্যাচ ছেড়ে দেবে। নানাভাবে সংকেত দেয়া হয়। হাতে তালি দিয়ে, পানির বোতল দেখিয়ে অথবা ফুটবলার ওয়ার্মআপে পাঠিয়ে।

পরিচয় গোপন করে তথ্য দেয়া ব্যক্তির কাছে, এই সাজানো মঞ্চের মূল নায়ক কিন্তু দেশীয় কোচ কিংবা ম্যানেজার নয়। তাদের সাইড নায়ক বানিয়ে মূল পরিকল্পনাটা আসে দেশের বাইরে থেকে। যেখানে সবচেয়ে বেশি নাম আসে ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের জুয়াড়িদের। বলেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বাইরে থেকে। ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দেশ থেকে। ১১ জনকে আলাদাভাবে ডাকা হয়। ভিডিও কল দিয়ে তাদেরকে দেখে জুয়াড়িরা। অফার দেয়, কাজ হলে আরও ২ লাখ টাকা পাবে। শ্রীলঙ্কার একজন আছে, যে কিনা তিন থেকে চারটি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করে।

এসব মাচ পাতাতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামের একটি হোটেলে। তাতে নির্ধারিত হয় ম্যাচের রুপরেখা আর টাকার অংক। আর ওই হোটেলের এক কর্মচারীকে দেয়া হয় ভুয়া গোলরক্ষক সাজার প্রস্তাব। যাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, সে নিজেই বিষয়টি সম্পর্কে যমুনা নিউজের কাছে স্বীকার করেন। বলেন, আমাকে প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিল, আমাদের একজন সহকর্মী তোমাকে ভিডিও কল দেবে। তখন তাকে বলতে হবে, তুমি গোলরক্ষক। এরপর এটি পারব না বলে জানিয়ে দিই তাদের।

তরুণ ফুটবলার তোলে আনার মঞ্চ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ। কিন্তু সেখানেই সরবে চলছে ম্যাচ গড়াপেটা। দেশের ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর হিসেবে পরিচিত এ টুর্নামেন্ট চলে কোটি টাকার জুয়া। এ জুয়ার আসর অনলাইনে চলে দেশে-বিদেশে।

/এমএন

Exit mobile version