Site icon Jamuna Television

জসিমের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প

জয়নাল আবেদিন:

৪০তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সপ্তম ব্যাচের (২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন। বাবা বজল করিম ও মা হামিদা বেগমের তিন সন্তানের বড় সে। তিনি বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে তিনি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন।

মাস্টার্স ফাইনাল ভাইভার দিনই প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে চাকরির যোগদানপত্র পেলাম। চাকরিও করেছিলাম দুইমাস। কিন্তু কোনো কিছুতে শান্তি পাচ্ছি না। এমন সময় ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফলাফলে উত্তীর্ণ হলাম। বাবাকে বললাম আমাকে আরও ছয়মাস খরচ চালাতে পারবেন কিনা। তাহলে আমি আপনাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। টানাপোড়েনের সংসার হলেও বাবা সাথে সাথে রাজিও হলেন। শুধু বাবা নয়, বাবার পাশাপাশি যে মানুষগুলোর জন্য স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব বিশ্বস্ত দুই বড় ভাই (বন্ধুর চেয়ে বেশি), খুব কাছের এক বন্ধু ও মামা। যারা আর্থিক সমর্থনের পাশাপাশি মানসিক সমর্থন দেয়ার কারণে স্বপ্নের গাড়িতে উঠতে পেরেছি আজ। আজীবন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের উত্তর হাজী পাড়ায় জসিম উদ্দিনের বেড়ে উঠা। ২০১০ সালে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ব্যবসা বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৮০ এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শেষ করেন জসিম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের পরামর্শে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। যদিও নগদ টাকার লোভ সামলানো খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। প্রস্তুতি নেয়ার তিনমাসের মাথায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বলতে গেলে স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ ভাইরাসটি। দুশ্চিন্তাও হতো, ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কি ভুলই করেছি! এসময় মনোবল শক্ত আর সাহস দেয়ার জন্য ছায়ার মতো সবসময় প্রিয় দুই ভাইকে পাশে পেয়েছিলাম।

বিসিএস ক্যাডার হবো সেই স্বপ্নের বীজ বপণ করেছিলাম ২০১০ সাল থেকে। দুইজন মহান শিক্ষকের সান্নিধ্যে পেয়ে ভালো কিছু করার সাহস পেয়েছিলাম। প্রিলিমিনারি, লিখিত উত্তীর্ণ হয়েও ভয়ে একটা স্ট্যাটাস দিতে পারিনি পাছে যদি চূড়ান্ত ধাপে না আসে! আলহামদুলিল্লাহ। যেখানে পিএসসিতে গিয়ে ভাইভা দেব স্বপ্নেও ছিল না এমনকি কখনও কল্পনাতেও ছিল না ক্যাডার হবো।

বরাবরের মতই, প্রথম কয়েক সেমিস্টার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়ায়, বিবিএ সমাপনী বছরের শুরু থেকেই একাডেমিক পড়াশোনা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছিলাম। সেমিস্টার এর আগেই কয়েকদিন পড়াশোনা করতাম। বাকিসময় গণিত আর ভোকাবুলারি নিয়ে পড়ে থাকতাম। স্নাতকোত্তর থাকাকালীন বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়েছিলাম।

জীবনে অনেক ভাইভা দিয়েছি, অনেকবার ব্যর্থও হয়েছি। সিজিডিএফ অডিটর এর ভাইভা এতটাই জঘন্য ছিল যে, ভাইভা শেষ করে অনেক কান্না করেছিলাম । অথচ সম্প্রতি কয়েকটা ভাইভাতে যোগদানও করিনি যাতে অন্য পরিশ্রমীদের চাকরি হয়। এটাই নিয়তি। জীবনটা আসলেই পুষ্পশয্যা নয়। লোহা যেমন পুড়তে পুড়তে খাঁটি হয়, ঠিক তেমনি ব্যর্থ হতে হতেই সফলতা দেখা দেয়।

বাসায় গেলে, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা প্রায়ই বলত, আর কতো! এইবার অন্তত পরিবারের হাল ধরো। চোখ কান বন্ধ করে ঝিম মেরে থাকতাম আর ভাবতাম সফলতা কতদূর! ঈদ আসলে চাকরি না পাওয়ার কষ্টটা আরও বেশি বেড়ে যেতো। জীবনে ব্যাংকের কোনো প্রিলিমিনারি ফেল করিনি, আবার কোনো সরকারি ব্যাংকের লিখিতও পাশ করতে পারিনি। ১ম বার বিসিএস দিয়েই ক্যাডার হবো কল্পনাতেও ছিল না। যাই হোক, আল্লাহ চাইলে অনেক কিছুই সম্ভব।

গেল ডিসেম্বর মাস থেকে ইসলামী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে কর্মরত আছি। আর ওইদিকে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক পদের পুলিশ ভ্যারিফিকেশন চলছে ডিসেম্বর মাস থেকে।

সফলতার পেছনে কিছু বিষয় আমি খুব বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালার নিকট একাগ্র চিত্তে প্রার্থনা, মা-বাবা, পরিবার এবং আশেপাশের মানুষের দোয়া, ঝুঁকি নেওয়া, আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার মতো বিশ্বস্ত কিছু মানুষ পাওয়া। এছাড়াও ধৈর্য ধরার ক্ষমতা, পরিশ্রম তথা কৌশলগত পরিশ্রম, লক্ষ্য পূরণ হওয়ার সাথে সাথেই নিজেকে পুরস্কার দেয়া, রুটিন হোক নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী, কত ঘণ্টা পড়বো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এক সপ্তাহে বা দিনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কতটুকু শেষ করবো।

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, এসব কিছুর মিশ্রণে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। পরকালেও যেন সফল হতে পারি, সবার কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী। আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা ও উত্তম রিযিক দান করুক।

৪১তম বিসিএস এসে লিখিত দিয়েছি এবং ৪৩তম এরও লিখিত দিবো। আল্লাহ যদি চান, প্রশাসনে যেতে পারলে হয়তো দেশের মানুষের জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারবো। একঘেয়েমি মুক্ত এবং সৃজনশীলতা ও বৈচিত্র্যময়তা রয়েছে এমন চাকরিই আমার সবসময় পছন্দের। পরিশেষে, অভিযোগ নয় বরং প্রতিটি সকালই হোক বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত।

Exit mobile version