Site icon Jamuna Television

ইউক্রেন হামলায় বিরোধিতার দিন শেষ, দেশে জনসমর্থন পাচ্ছেন পুতিন

মস্কোর থিয়েটার ভবনে অঙ্কিত 'জেড', যা যুদ্ধের প্রতি সমর্থনকেই প্রকাশ করছে। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে হামলার পর নিজ দেশে যে ভীষণ সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তা অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন জরিপ ও ইন্টারভিউ। সেই সাথে জনসমর্থন অনেকটাই বেড়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের। রাশিয়ার অনেক মানুষই এখন বিশ্বাস করে যে, যুদ্ধটা চালাচ্ছে পশ্চিমা শক্তি। আর এ অবস্থায় নিজেদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল থাকা উচিত বলেও মত দিয়েছে অধিকাংশ রুশ নাগরিক। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

সেন্ট পিটার্সবার্গের আইনপ্রণেতাদের কাছে যুদ্ধবিরোধী চিঠির জোয়ার থেমে গেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর যেসব রুশ এর প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন, তারাও ধীরে ধীরে সমর্থন দেয়া শুরু করেছে এই আগ্রাসনের। জনসম্মুখে যারা ইউক্রেনে রুশ হামলার ব্যাপারে ক্রেমলিনের সমালোচনা করেছিলেন, তারা অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় দেখতে পাচ্ছেন কাগজে ‘প্রতারক’ লিখে সেঁটে দিয়ে গিয়েছে কেউ।

ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হামলার ৫ সপ্তাহ পর তাই পাল্টে গেছে রাশিয়ার চিত্রপট। রাশিয়ান সেনাদের প্রতি দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মনোভাবে এসেছে পরিবর্তন। ইউক্রেনে রুশ সেনাদের প্রতি সহানুভূতিই জেগেছে তাদের মাঝে, সেই সাথে পশ্চিমাদের ওপর তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। টেলিভিশনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের জায়গা দখল করে রেখেছে এমন কিছু অনুষ্ঠান যেখানে প্রচারিত হচ্ছে কিছু বিতর্কিত বিষয়। ইউক্রেনে নাৎসিদের উত্থান ও রাষ্টক্ষমতা দখল, যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় কিয়েভে নির্মিত জৈব অস্ত্রের গবেষণাগারের মতো কিছু গুজব প্রচারিত হচ্ছে টেলিভিশনে।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ বিরোধী সমাবেশে ব্যাপক ধরপাকড় করে রুশ পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন পোল ও ইন্টারভিউ বলছে, অনেক রুশ এখন পুতিনের যুক্তিকে মেনে নিয়েছে যে, পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউক্রেনে আক্রমণ ছাড়া তাদের অন্য কোনো পথ ছিল না। তাছাড়া যুদ্ধের বিরোধিতাকারীদেরও চুপ হয়ে যেতে দেখা গেছে। অনেকে ছেড়েছেন দেশ।

রাশিয়ার প্রভাবশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান লেভাদার পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, যুদ্ধে পুতিন পেয়েছেন ৮৩ শতাংশ দেশবাসীর সমর্থন, যা গত জানুয়ারিতেও ছিল ৬৯ শতাংশ। ৮১ শতাংশ রুশ বলছেন, তারা যুদ্ধকে সমর্থন করেন। রাশিয়ান ভাষাভাষীদের রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তাকে এই যুদ্ধের প্রাথমিক ন্যায্যতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন তারা।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, আগামী মাসগুলোতে নিষেধাজ্ঞার দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থা আরও ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে জনসাধারণের ভাবনা ও সমর্থনের পালে পরিবর্তিত বাতাসও লাগতে পারে। কেউ কেউ আরও যুক্তি দিয়েছেন যে, যুদ্ধকালীন ভোটের খুব বেশি তাৎপর্য নেই। অনেক রাশিয়ান এখন অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে ভিন্নমত প্রকাশ করতে বা তাদের সত্যিকারের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পায়। কারণ, নতুন সেন্সরশিপ আইনে সরকারবিরোধী কোনো বক্তব্য প্রকাশের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছরের হাজতবাসের শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন।

ক্রিমিয়া দখলের বর্ষপূর্তিতে পুতিন তার জনসমর্থনের পরীক্ষায় উৎরে যান। ছবি: সংগৃহীত

তবে এসব প্রভাবের কথা মাথায় রেখেও লেভাদার পরিচালক ডেনিস ভলকভ বলেছেন, জরিপের ফলাফলে স্পষ্ট যে, পশ্চিমাদের দ্বারা অবরুদ্ধ অবস্থায় রুশ নেতৃত্বের প্রতিই আস্থা রাখা উচিত বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে জনসাধারণ। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করেছে আরও একটি ব্যাপার। আকাশপথ বন্ধ, ভিসা বিধিনিষেধ এবং ম্যাকডোনাল্ডস, আইকেইএ’র মতো জনপ্রিয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়ায় রুশদের মধ্যে একটি মনোভাব দানা বেঁধেছে, আর তা হলো, এই যুদ্ধে মদদ দিচ্ছে পশ্চিমারা। তারাই অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধ করেছে রাশিয়া: জেলেনস্কি

এম ই/

Exit mobile version