Site icon Jamuna Television

মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছেন দিনমজুর বাবার মেয়ে, খুশি চাপা পড়েছে অনিশ্চয়তায়

জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শাবনূর, কিন্তু লেখাপড়ার খরচ জোগানো নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

পিরোজপুর প্রতিনিধি:

দিনমজুর বাবার মেয়ে মোসাম্মৎ শাবনূর সুযোগ পেয়েছেন মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করার। এ খবরে খুশিতে আত্মহারা হয়েছিল শাবনূরের পরিবার। তবে তাদের এ খুশি চাপা পরেছে আর্থিক অস্বচ্ছলতায়।

জানা গেছে, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাবুল মোল্লার মেয়ে শাবনূর। দারিদ্র্যের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে শাবনূরের এ সফলতা কতটা সার্থক হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় শাবনূরের পরিবার। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার খরচ জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য পরিবারের কাছে, সেখানে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া অনেকটাই অসম্ভব শাবনূরের পরিবারের কাছে। 

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারকাঠী গ্রামের মো. বাবুল মোল্লা ও সাবিনা বেগম দম্পতির ৩ সন্তানের মধ্যে শাবনূর সবার বড়। এ বছর এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়  জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শাবনূর। এর আগে, বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন শাবনূর।

শাবনূর নেছারাবাদ উপজেলার দক্ষিণ কামারকাঠী সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় থেকে পি এস সি, কামারকাঠী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাস করেন। পরে স্বরুপকাঠী শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিসহ সকল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শাবনূরের বাবা বাবুল মোল্লা পেশায় একজন দিন মজুর। তার নিজের বাড়ির ২ কাঠা জায়গা ছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই। সেখানেই একটি ছোট টিনের ঘরে তাদের বসবাস। দিনমজুরি করে ৫ সদস্যের পরিবারের খাবার জোগাতেই নাভিশ্বাস ওঠে বাবুল মোল্লার। এর মধ্যেই অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে এসেছে শাবনূর। সুযোগও পেয়েছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার। তবে মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই শাবনুরের পরিবারের। 

শাবনূরের বাবা বাবুল মোল্লা জানান, আমি একজন দিনমজুর, যখন যে কাজ পাই তাই করি। সেই টাকা দিয়েই  পরিবারের ৫ জনের মুখের আহার তুলে দেয়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। আমার মতো মানুষের সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে মেয়ের মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার কাছে দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি আমার মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারবো কি না তা এখনও জানি না।

শাবনূর জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সময় অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় সব বই একসাথে কিনতে পারতাম না। একটা একটা করে বই কিনতাম কখনও কখনও আমার স্কুলের স্যাররাও বই কিনে দিতেন। এখন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি কিন্তু মেডিকেলের বইয়ের দাম অনেক বেশি এছাড়া জামালপুরে থাকা-খাওয়াসহ পড়াশোনার খরচও অনেক। এত খরচ আমার গরীব বাবা কোথায় পাবে? কীভাবে পড়ালেখার খরচ চালাবো?

শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজর সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, শাবনূরের অধ্যবসায় ও মেধার কাছে দারিদ্র্যতা হার মেনেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সব সময়ই মেয়েটির পাশে থাকতে পেরে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাদের কলেজসহ উপজেলাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।

নেছারাবাদ  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসেন জানান, যারা উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী, সরকার সব সময় তাদের পাশে আছে। শাবনূর অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে সংগ্রাম করে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে শুনে আমরা আনন্দিত। শাবনূরকে ভর্তি হতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন ইউএনও।

/এসএইচ

Exit mobile version