Site icon Jamuna Television

বেগুনি পাতার ধান চাষে চমক সৃষ্টি দুলালীর

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
ধানের শীষের রং হলদে-সবুজ কিন্তু পাতার রং বেগুনি। এমন অদ্ভুত জাতের বেগুনি পাতার ধান নিয়ে উৎসুক গাইবান্ধার কৃষক ও কৃষি বিভাগ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের নারী কৃষক দুলালী বেগম এমন ধান চাষে তাক লাগিয়েছেন সবাইকে। প্রতিদিনেই এই ধান ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন কৃষক ও উৎসুক মানুষরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধান সম্প্রসারণ ও চালের পুষ্টিগুন জানতে গবেষণা প্রয়োজন।

সরেজমিনে গিয়ে বেগুনি পাতার ধান ক্ষেত দেখে প্রথমে অবাক হবেন যে কেউ। চারদিকের মাঠ জুড়ে সবুজ ধান ক্ষেত এখন সোনালী রুপ ধারণ করেছে। কিন্তু সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে বেগুনি পাতার ধান দেখে অবাক কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। সুন্দরগঞ্জের রামজীবন ইউনিয়নের আইপিএম কৃষক ক্লাবের নারী কৃষক দুলালী বেগম ২০ শতক জমিতে এই ধান চাষ করেছেন।

দুলালী বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি নিজের সামান্য জমি চাষাবাদ করেন। গত বছর নিজের চাষ করা ব্রি-২৮ ধানের জমিতে কয়েকটি বেগুনি পাতার ধান দেখতে পান। ধানের শীর্ষ থেকে তিনি বিজ সংগ্রহ করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার এই ধান চাষ করেন। নতুন জাতের এই ধান নিজের নাম ‘দুলালী সুন্দরী ধান’ হিসেবে ছড়িয়ে দিতে চান দুলালী বেগম।

দুলালী বেগমের এমন ব্যতিক্রম ধান চাষ এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছে। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে বেগুনি পাতার ধানের একটি ছড়ায় কুষির সংখ্যাও বেশি। এই ধান দেখে খুশি হয়েছেন কৃষক ও এলাকাবাসী।

ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, দুলালী বেগমের ধান ক্ষেত দেখতে খুব সুন্দর। অল্প সময় আর কম খরচে ফলন ভালো হয়েছে। দুলালী বেগমের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে আগামি বছর তিনিও জমিতে বেগুনি ধান চাষ করবেন’।

কৃষকরা জানান, এরআগে কোথাও এমন ধান ক্ষেত দেখেনি কেউ। দুলালী বেগমের এই ধান দেখে রীতিমতো এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা বেগুনি ধান চাষে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকেই বীজ চেয়েছেন দুলালীর কাছে।

এদিকে, দুলালী বেগমের এ ধান ক্ষেতের খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনেই আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকসহ নারী-পুরুষরা ভিড় করছেন ধান ক্ষেত দেখতে। এছাড়া প্রতিদিনেই স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ধান ক্ষেত দেখতে আসছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জামিউল ইসলাম বলেন, অল্প সময়ে কম খরচে উচ্চ ফলনশীল বেগুনি পাতার ধানে ব্লাস্ট বা কোন পোকামাকড়ের আক্রমণও নেই। জমিতে ধানের ফলনও হয়েছে বেশ ভালোই। উৎপাদিত এই ধানের বিজ সংরক্ষণের জন্য দুলালী বেগমকে সব উপকরণ দেয়া হয়েছে। এ বিজ সংরক্ষণের মাধ্যমে আগামীতে কৃষকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী কৃষি বিভাগ’।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম থেকে নিজেই মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দুলালী বেগমের ধান পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্তমানে জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। হয়তো এক সপ্তাহ পরেই ধান কাটা সম্ভব হবে। বেগুনি পাতার এই ধান চাষ দেশীয় উপষী জাতের ধান চাষের মতোই। ধানের এই জাত নতুন হওয়ায় এর সম্প্রসারণ, চালের বৈশিষ্ট ও পুষ্টিগুন জানতে গবেষণা প্রয়োজন’।

তিনি আরও বলেন, ‘দুলালী বেগমের এই ধান চাষ হলেও এর কোন নাম জানা নেই। কিন্তু উপজেলা পরিষদের সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে দুলালী বেগমের নাম অনুসারে এই ধানের নামকরণ করা হয়েছে ‘দুলালী সুন্দরী ধান’।

Exit mobile version