Site icon Jamuna Television

জিপিএ-৫ পাওয়া দরিদ্র দুই বোনের সামনে এখন বাল্যবিয়ের শঙ্কা

প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, স্টাফ রিপোর্টার

দুই বোন কবিতা ও মোহনা। ৯ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত বাবার আদর মনে নেই ওদের। মায়ের ক্লান্তিহীন চেষ্টা ও নিজের অদম্য মানসিকতাকে সম্বল করে মামা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েই দুই বোন অর্জন করেছে এসএসসিতে জিপিএ-৫। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর জিপিএ ৫ পেলেও দারিদ্রতার কারণে ভবিষ্যৎ লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শংকিত মা। কারো সহায়তা না পেলে অদম্য মেধাবী দুই মেয়ের বাল্যবিয়ের ভাবনা এখন মায়ের মাথায়।

জানা গেছে, ৯ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা প্রবাসী আব্দুল কাদের মাতুব্বর প্রবাসেই মৃত্যু হয়। ৩ মেয়েকে নিয়ে হিমশিম খাওয়া কল্পনা বেগম বাধ্য হয়ে তখন ক্লাশ ওয়ান পড়ুয়া অবস্থাতেই কবিতা ও মোহনা ২ মেয়েকে মামা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। অভাব-অনটনের সংসারে টানাপড়েন লেগে থাকলেও তা নিয়ে কখনোই মন খারাপ করেনি এই দুইবোন। সামর্থ্য অনুযায়ী যা পেয়েছে তাতেই ছিল সন্তুষ্টি। ভাল পোশাক নয়, ওরা শুধু বই আর খাতা কলম চাইতো মায়ের কাছে। বর্তমানে তা দিতেও অপারগ মা অনেকবারই ভেবেছেন মেয়েদেরই বাল্য বিয়ের কথা। কিন্তু ওদের পড়ার নেশার কাছে মায়ের এই চিন্তা হার মানতে বাধ্য হয়।

৫ম ও ৮ম শ্রেনীতে দুই বোন পায় জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। শুরু থেকেই ২ বোনের দখলে ছিল ক্লাসের এক ও দুই নং রোল। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বশেষ এসএসসি পরীক্ষায় গতকাল পেয়েছে জিপিএ-৫।

জানতে চাইলে কবিতা বলেন, ‘ডাক্তার হবার ইচ্ছা থেকেই সায়েন্স নিয়ে পড়া। ডাক্তারই হতে চাই। উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে চাই শহরের ভালো একটি কলেজে। কিন্তু পারবো কিনা তা এখনো নিশ্চিত নই। শহরে পড়ার মতো আর্থিক অবস্থা যে আমাদের নেই!’

ছোট বোন মোহনা বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের নিয়ে মায়ের যুদ্ধ। আমরা ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে হবে কি না বুঝতে পারছি না।’

মা কল্পনা বেগম বলেন, ‘ওদের বাবা যখন মারা যায় তখন ওদের বয়স ৭ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিই। টানাটানির সংসারে কোন মতে ওদের নিয়ে বেঁচে আছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে এই পর্যন্ত দুই বোনই ভালো রেজাল্ট করে আসছে। স্বপ্ন বড়। কিন্তু ভালো কোন কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা আমরা নই। ভাগ্যে কি আছে জানি না! সহায়তা না পেলে বিয়ে দিয়ে দেব। কিছু করার নেই।’

উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ওরা দুই বোন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে বলে বিশ্বাস করি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশ্রাফুল আলম বলেন, ‘ওরা মেধাবী এবং দরিদ্র। এই কারণেই বিদ্যালয়ের বেতন, টিউশন ফি, ফরম পূরনের টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে এই দুই বোনকে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। ওরা আমাদের গর্ব।’

কবিতা ও মোহনাকে কেউ সহায়তা পাঠাতে চাইলে তাদের পারিবারিক নম্বরে (০১৭২১০৯১৯০৫) যোগাযোগ করতে পারেন।

Exit mobile version