Site icon Jamuna Television

একজন মাহাথির মোহাম্মদ

যে বয়সটা বই পড়ে, বাগান করে কাটানোর সময়, সেই বয়সে দিব্যি রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাহাথির মোহাম্মদ। মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শপথ নিতে যাচ্ছেন বিশ্বের প্রবীণতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিশ্বজুড়ে আবারও তুমুল আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে মালয়েশিয়ার রাজনীতির এই প্রবাদ পুরুষকে ঘিরে।

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত মালয়ের কেদাহ অঞ্চলের সেতার নামক গ্রামে সাধারণ এক স্কুল শিক্ষকের ঘরে জন্ম নেন মাহাথির। তার আগে যে তিন জন প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া শাসন করেছেন তারা সবাই ছিলেন সমাজের অভিজাত শ্রেণির। সেই হিসেবে মাহাথির বেশ সাধারণ ঘর থেকেই উঠে এসেছেন।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে মালয়ের একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হন তিনি। বরবরই প্রথম স্থান অধিকার করে এগিয়ে নেন শিক্ষাজীবন। ইংরেজির শিক্ষক বাবার সংস্পর্শে থেকেই কিনা এই ভাষায় জাদুকরি দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। ১৯৪৭ তিনি সিঙ্গাপুরের কিং অ্যাডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মাহাথিরসহ মাত্র ৭ জন মালয় শিক্ষার্থী তখন সেখানে পড়াশোনা করছিলেন।

এমবিবিএস পাসের পর মালয়েশিয়ার একটি সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন মাহাথির। সরকারি বিধিনিষেধের ওপর বিরক্ত হয়েই কিনা, কিছুদিন পর নিজেই খুলে বসেন প্রাইভেট ক্লিনিক। মালয় বংশোদ্ভুত কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন একমাত্র হাসপাতাল ছিল এটি। অনেকে মনে করেন, শুধু রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন মাহাথির। রাজনৈতিক দল ইউএমএনও থেকে মালয় প্রাদেশিক রাজ্যের শীর্ষ পদে নিয়োগ পান।

চিকিৎসক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মাহাথির। বাড়তে থাকে তার গণসম্পৃক্ততা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের একদম কাছাকাছি থাকতেন এই নেতা। এই বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই কিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।

১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহাথির। পুনরায় নির্বাচিত হন ১৯৬৯ সালেও। নিজ দলের প্রধান এবং মালয়েশিয়ার তৎকালীল প্রধানমন্ত্রী টেংকু আবদুর রহমানের সাথে মত বিরোধের জেরে ৩ বছর রাজনীতি থেকে অবসরে ছিলেন। ১৯৬৯’র ৩০ মে সংঘটিত চীনা ও মালয়ীদের মধ্যকার দাঙ্গার জন্য টেংকু আবদুর রহমানকে দায়ি করেছিলেন মাহাথির।

অবশেষে, ১৯৭২ সালে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন মাহাথির। সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয় লাভের পর শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তুন হোসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরলে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৭৬ সালে।
১৯৮১ সালের নির্বাচনে দেশটির চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ। দীর্ঘ ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে আসেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ।

তার মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। উন্নয়নমূলক নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে বদলে দেন মালয়েশিয়াকে। তাই তাকে বলা হয়, আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক। ক্ষমতায় আসার পর একের পর পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি বাস্তবায়নও করেছেন সেগুলো। দেশটির ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মসূচিও তাঁর ঘোষণা করা ছিল। মাহাথির শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক-

মাহাথির ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। কর্মীদের যা করতে বলেছেন তা নিজে করেও দেখিয়েছেন। সরকারি কর্মীরা যেন ঠিক সময়ে অফিসে আসেন সেজন্য নিজেও ঠিক সময়ে অফিসে আসতেন। টাইম ম্যাগাজিন একবার তার অফিসে আসার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন মাহাথিরের অফিসে প্রবেশের সময় ছিল সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭ মিনিটে।

সিঙ্গাপুরে মেডিকেলে পড়ার সময় মাহাথিরের সহপাঠী ছিলেন সিতি হাসমাহ। এই সিতিকেই নিজের জীবন সঙ্গী করে এতটা পথ হেঁটেছেন।

রাজনীতিতে ফিরে এসে মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতের পর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। আবারও সূচনা হচ্ছে মাহাথির যুগের।

যমুনা অনলাইন: এটি

Exit mobile version