Site icon Jamuna Television

নিয়মনে শিল্পকথন

ওয়াকিলুর রহমানের শিল্পকর্ম।

রেজাউর রহমান

সংযম শব্দটি কানে এলেই যেন নিয়মতান্ত্রিক জীবনের কথা মনে হয়। নিজেকে সংযত রেখে সংহত করা, তবে তা পার্থিব জগতের বাইরে গিয়ে নয়, এই প্রকৃতির অধীনস্থ হয়েই সংযমে অন্তঃস্থ হওয়া। সংযম-ধর্ম গোত্রীয় শব্দ হলেও তার ব্যবহার নানাভাবে জীবনে আসতে পারে। ইসলামি সুফিবাদ থেকে বাউলতত্ত্ব তালাশ করলে এই সংযম আসবে ভিন্নভাবে। তবে আত্মাকে কষ্ট দিয়ে নয় পূর্ণ শান্তির আশায় সংহত হওয়া, এমনই সংযমের পথের পাথেয় হয়েছেন শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান।

শিল্পী গেরুয়া কোনো পোশাক বা সুফিদের মতন সাদা কাপড়ে নিজেকে আবৃত করেন নাই, তিনি সংযমে লিপ্ত, ক্যানভাসে-রেখায়-বর্ণে-কাগজে শিল্পের ভাষাকে নিয়মনে ব্যক্ত করতে। কয়েক দশকের শিল্প চর্চায় তিনি উপস্থিত হয়েছেন নানাভাবে।

হয়েছেন শিল্পের তীর্থযাত্রী, অ্যাকাডেমিক ধারাকে নানাভাবে উপস্থাপন করা থেকে শুরু করে তা বর্জন কীভাবে করতে হয় তা-ও দেখিয়েছেন। সময় যত গড়ায় বক্তব্য তত সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, যেখানে সাহিত্যের শেষ সেখানে শিল্পের শুরু।

শিল্পের বিশালত্বকে সংকোচন করতে হয় তার প্রকাশের মাধ্যমে। সহজ কথা সহজ করে বলাটা কঠিন, কিন্তু শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান দীর্ঘ পথ হেঁটে এই সহজ কথাটি পরিমিতমাত্রায় প্রকাশ করেছেন সংযম শিরোনামে চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে।

গ্যালারি কলা কেন্দ্রের দেয়ালে শিল্পের সংযম কীভাবে হতে পারে, কী ফর্মে, রেখায়, বর্ণে তা পরতে পরতে দেখিয়েছেন। সকল দিক থেকে সংযত তিনি, শুধু কী শিল্পে? তা মনে হয় না, বলা হয় একজন শিল্পীর জীবনপ্রণালী তার শিল্পের সাথে সহাবস্থান প্রক্রিয়া নির্ণয় করে।

শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান মূর্ত-বিমূর্ত সকল বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে সংযত হচ্ছেন শিল্পের ভাষায়। সংযম তিনি ভাঙ্গালেন কলা কেন্দ্রে।। তবে শিল্পের সংযম ভাঙ্গাটা অতটা সহজ বা সময় বেধে দিয়ে হয় না। আত্মচিত্তের ইন্দ্রিয় ইঙ্গিত এই সংযম ভেঙে দিতে পারে। ওয়াকিলুর রহমান চিন্তায় বা শিল্পের উপকরণ নিয়ে সংযম করেন বলে মনে হয় না, বক্তব্যে সংযত তিনি, স্পেস ব্যবহারে, রেখা টানতে কোলাজ ও সংক্ষিপ্ত বর্ণের ব্যবহারে তিনি সংযমে পরিপূর্ণ। সাদা-কালোকে বেছে নিয়েছেন কিন্তু আত্নাকে পুলকিত রেখেছেন সংক্ষিপ্ত রঙের ব্যবহারে।

গ্রীক দার্শনিক ডায়োজিনিস যিনি সিনিসিজমের জন্মদাতা এবং মিনিমালিজম এর বক্তব্য পেশ করেছেন কয়েক শতাব্দী আগেই, ফলে হাল জীবনের চর্চিত মেদহীন শিল্প কতটা প্রাসঙ্গিকতা লাভ করবে তা দেখবার বিষয়।

ষাটের দশকের মার্কিন মুল্লুকে চর্চিত শিল্পকে বর্জন ও পরবর্তীতে বিদ্রোহী হয়ে উঠে মিনিমালিজমের পথে অগ্রসর হওয়া শিল্পীগণের পদাঙ্ক অনুসারী শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান কলা কেন্দ্র নিয়মনের মাধ্যমে স্ব-ভূখণ্ডের চিত্র কলার অবস্থান থেকে বের হয়ে কোন নতুন আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন নাকি শুধুই নিজেকে তুষ্ট রাখা। প্রদর্শনী দেখে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে,” No news is good news.”

শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের সংযম ও তা ভাঙ্গার প্রক্রিয়া শিল্পে নানাভাবে উপস্থাপিত হবে। শিল্পীরা বর্ণে, ফর্মে, রেখাচিত্রে পরিপূর্ণ হবেন এবং সংযম ভাঙ্গাবেন গ্যালারিতে বা তারচেয়েও সংক্ষিপ্ত হয়ে অন্য কোনো নিয়মনের মাধ্যমে।

Exit mobile version