Site icon Jamuna Television

টেক্সাসে হামলা: মৃত সহপাঠীদের রক্ত মেখে মরার ভান করেই প্রাণ রক্ষা সেরিলোর

টেক্সাসের বিদ্যালয়ে বন্দুক হামলার ঘটনায় বুদ্ধির জোরে বেঁচে যাওয়া মিয়া সেরিলো। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রব এলিমেন্টারি স্কুলে সম্প্রতি হওয়া বন্দুক হামলায় প্রাণ যায় ১৯ শিশু ও দু’জন শিক্ষকের। এই ভয়াবহ ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যায় ১১ বছরের শিক্ষার্থী মিয়া সেরিলো। বুদ্ধির জোরে হামলাকারীর চোখ ফাঁকি দেয় সে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতাই খুলে বলে সেরিলো।

সেরিলো জানায়, ঘটনার দিন তাদের ক্লাসে ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’ নামের একটি ছবি দেখাচ্ছিলেন শিক্ষক। সিনেমাটি শেষ হলেই শোনা যায়, তাদের স্কুলের মধ্যে একজন বন্দুকধারী অপেক্ষা করছেন। এরপরই শিক্ষক ছুটে গিয়ে ক্লাসের দরজা লাগাতে যান। তবে ততক্ষণে সেই বন্দুকধারী তাদের ক্লাসে ঢুকে পড়ে।

সেরিলো জানায়, প্রথমে সেই হামলাকারী শিক্ষকের চোখে চোখ রেখে বলে ‘গুডনাইট’। এরপরই তাকে গুলি করে সে। এরপর ক্লাসের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া শুরু করে হামলাকারী। ঝরঝর করে ভেঙে পড়তে থাকে ক্লাসরুমের কাঁচের জানালাগুলো। কয়েকটি গুলি ছুটে যায় সেরিলোর কানের পাশ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে তার অনেক সহপাঠী। রক্তে ভেসে যায় ক্লাসরুম।

সেরিলো জানায়, এরপর বন্দুকধারী চলে যায় পাশের ক্লাসে। সেখান থেকেও তখন গুলি আর চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। এই ফাঁকে সে মৃত শিক্ষকের ফোন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯১১ এ ফোন করে। তবে তার ধারণা ছিল, সেসহ সেই ক্লাসে তার বাকি যেসব সহপাঠী বেঁচে ছিল তাদেরকে মারতে হামলাকারী আবারও ফিরে আসবে। তাই মেঝেতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত সহপাঠীদের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে নিজের গায়ে মাখে সেরিলো। তাকে অনুসরণ করে একই কাজ করে তার অন্যান্য অক্ষত সহপাঠীরাও। এরপর নিহতদের মধ্যে মরার মতো করে পড়ে থাকে তারা।

সাক্ষাৎকারের সময় সেরিলোর চোখ আতঙ্ক আর ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। সে জানায়, ওই অবস্থায় প্রায় ৩ ঘণ্টা পড়ে ছিলাম মরার মতো। আমার চারপাশে তখন সহপাঠীদের তাজা রক্ত ভেসে যাচ্ছে। আমার গায়েও তাদেরই রক্তে মাখামাখি। এমন সময় শুনতে পেলাম স্কুলের বাইরে পুলিশের কণ্ঠস্বর। কিন্তু তারা কেনো আমাদের উদ্ধারের জন্য এত পরে এলো এবং এখনও কেনো ভেতরে আসছে না এই ভেবে আরও ভয় লাগছিল। পরে পুলিশই এসে আমাদের উদ্ধার করে।

সেরিলোর মা জানান, তার মেয়ে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। বাড়িতে কলিং বেল বাজলে বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দ হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে। অ্যালার্মের শব্দ শুনেও চমকে ওঠে সেরিলো।

তবে এই শিশুটিকে ‘অলৌকিক’ হিসেবে মানেন তার বাবা-মা। তার মা জানান, সেরিলো পেটে টিউমার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। তার বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে তিন বছর বয়সে সফল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে সে টিউমার অপসারণ করা হয়। তখন থেকে সেরিলোকে ‘অলৌকিক শিশু’ বলে ডেকে থাকে পরিবারের লোকজন। টেক্সাসের ঘটনার পর এ নামকরণ আরও জোরালো হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

এসজেড/

Exit mobile version