Site icon Jamuna Television

জনপ্রতিনিধির অনিয়ম নিয়ে সংবাদ: যমুনার প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ২ মামলা

নাটোর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আলী আকবরের হুমকি ধামকি, চাঁদাবাজি, দোকান ও পুকুর দখল নিয়ে প্রতিবেদন করায় যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার এবং নাটোর টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানের নামে দুটি মামলা দায়ের করেছে জনপ্রতিনিধির দুই সমর্থক।

জানা যায়, নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দুটি মামলা করা হয়। জেলা পরিষদের সদস্য আলী আকবর সশরীরে উপস্থিত থেকে তার সমর্থক শহরের আলাইপুর এলাকার বাসিন্দা খন্দকার সোহেল রানা সৈকতকে দিয়ে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ৩ মে সৈকত তার নিকট আত্মীয় আজিজুল হকের গাজীপুর বিলের পুকুর কাটার তদারকি করার সময় এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন অভিযুক্ত সাংবাদিক। স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সৈকতের নিকট আত্মীয় নয় আজিজুল। আজিজুল হকের জমি লিজ নিয়ে পুকুর কাটছে মোস্তফা নামে স্থানীয় একজন।

এ বিষয়ে মোস্তফা জানান, আজিজুল হকের জমি লিজ নিয়ে পুকুর কাটছি। এ পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক আসেনি। জমির মালিক বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। সোহেল রানা সৈকত নামের কাউকে চিনি না। তার তদারকি করার প্রশ্নই আসে না।

এ বিষয়ে মামলার বাদি খন্দকার সোহেল রানা সৈকতের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। অন্যের প্ররোচণায় এমন মামালা কেন এই প্রশ্নে সৈকত মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দ্বিতীয় মামলাটি করেন সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিন। গত ১৩মে দায়ের হওয়া মামলায় ঘটনার তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয় ১০মে সকাল ১১টায়। ঘটনাস্থল বাগরোম বাজার। চাঁদা চেয়ে না পেয়ে বাদীকে পেটানোসহ হুমকি ধামকির কথা উল্লেখ করা হয়।

অথচ, ঐদিন সাংবাদিক নাজমুল হাসান দয়ারামপুরে সেনাবাহিনী পরিচালিত বাউয়েট টেক ফেয়ারে আমন্ত্রিত হয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন।

বাউয়েট শিক্ষক হামিদুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন জানান, যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল হাসান আমাদের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে ১০ তারিখ সকাল ১০টায় রেজিস্ট্রেশন করে অনুষ্ঠান কাভারেজ দিয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাকে আমরা বিদায় জানাই। তার সাথে সাংবাদিক কালিদাস রায়ও উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদি ইসলাম উদ্দিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে নাজমুল হাসানকে চেনেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, অল্প অল্প চিনি। নাজমুল দেখতে কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি যা বর্ণনা করেন তাতে প্রতীয়মান হয় যে উক্ত সাংবাদিকের সাথে তার কখনো সাক্ষাৎ হয়নি।

কেন মামলা করলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চাঁদা চেয়েছিল তাই করেছি। কিন্তু ১০তারিখে সকাল ১০টা থেকেই নাজমুল সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগামে ছিলেন এমন প্রশ্নে ইসলাম উদ্দিন বলেন, তাহলেতো ভুল-ই হয়ে গেল। এখন একটা শালিসে আছি পরে কথা বলবো বলেই মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সদস্য আলী আকবর জানান, মামলা বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যারা মামলা করেছে তারাই এ বিষয়ে বলতে পারবে। আমি তরিকা করা লোক। মানুষের ক্ষতি হোক আমি এমন কিছু করি না। মামলার সময়ে নিজে উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন তিনি।

যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল হাসান জানান, গত ৭, ৮, ৯মে যমুনা টেলিভিশনের সংবাদ ও ‘ক্রাইম সিন’ নামক অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ সদস্য আলী আকবরের হুমকি ধামকি, চাঁদাবাজি, দোকান ও পুকুর দখল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এই প্রতিবেদন করার সময় থেকে সমঝোতার জন্য বারবার তাগাদা আসছিল। রিপোর্ট প্রচার হলে কয়েকটি মামলা হবে এমন কথা বলা হচ্ছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আলী আকবর তার দুই সমর্থক দিয়ে মামলা দুটি করিয়েছেন বলে জানান নাজমুল।

নাটোর টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বাপ্পী লাহিড়ী জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একজন জনপ্রতিনিধির এ ধরনের আচরণ মোটেই কাম্য নয়। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।

যমুনা অনলাইন: এটি

Exit mobile version